ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নোয়াখালীতে বন্যায় ডায়রিয়ার প্রকোপ ওষুধের তীব্র সংকট

বদিউজ্জামান ( তুহিন) নোয়াখালী : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:২৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ধীরগতিতে হলেও নোয়াখালীতে কমছে বন্যার পানি, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শুধুমাত্র ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। ওষুধের সংকটের পাশাপাশি রয়েছে ওষুধ না দেয়ার অভিযোগও। জানা যায়, নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৮টি উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। বন্যার পানি খুবই ধীরগতিতে নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধসহ নার্স ও চিকিৎসক5 সংকটও রয়েছে।রোগীর স্বজনদের অভিযোগ শয্যা ও বিছানার চাদর পেতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

 

হাসপাতালে সরজমিন দেখা যায়, নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৬৬ জন রোগী। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শয্যা, ওষুধ, নার্স ও চিকিৎসক সংকটে রোগীদের অবস্থা কাহিল। চাপ সামাল দিতে চিকিৎসাকর্মীদের ত্রাহী অবস্থা। রোগীর চাপে ঠাঁই মিলছে না হাসপাতালে। কেউ বারান্দায় আবার কেউ মেঝেতে, কাউকে সেবা নিতে হচ্ছে সিঁড়িতে বসে। এর সঙ্গে বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো ডাক্তারের দেখা পান না। তখন নার্সই তাদের একমাত্র ভরসা। অনেক সময় চিকিৎসক তো দূরের কথা, কোনো নার্সকেও তারা ডেকে পান না। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না। নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন, তা দেখে বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেয়া হচ্ছে না। দায়িত্বে থাকা কিছু নার্স স্যালাইন লুকিয়ে রাখে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজীম জানান, গত দুই সপ্তাহের বন্যায় নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়। এর বাহিরে কারও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা আমাদের রেকর্ডে নেই। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন রোগীর স্বজনদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বন্যার মতো একটি ভয়াবহ দুর্যোগকালীন মুহূর্তে কয়েকগুণ বেশি রোগীর চাপ। এরপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায় রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অস্বীকার করবো না জনবলের সংকট, ওষুধের সংকট আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বন্যার এই দুর্যোগকালীন সময়ে নোয়াখালীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পর্যাপ্ত জরুরি ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি।