যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ গত সোমবার তিনি এই কথা বলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ফ্লোরিডায় পাম বিচে অবস্থিত নিজ বাসভবন মার-এ-লাগোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি করতেই হবে।’ এ সময় তিনি বলেন, তিনি পুতিন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর বিষয়ে। তিনি বলেন, সংঘাত থেকে আসা ধ্বংসযজ্ঞের ছবি তাঁকে বিচলিত করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা বন্ধ করতে হবে।’
যুদ্ধ বন্ধের জন্য সমঝোতার অংশ হিসেবে ইউক্রেন রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছাড় দেবে কিনা—এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি ট্রাম্প। এর বদলে তিনি বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ অনেক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে এক শতাব্দী লেগে যাবে। আমি বলতে চাই, এমন কিছু শহর আছে যেখানে একটি ভবনও অক্ষত নেই, পুরো এলাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায়।’
ট্রাম্প আরও বলেন, তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রের এমন ছবি দেখানো হয়েছে—যেখানে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই বিষয়টি তাঁকে ১৮৬১-১৮৬৫ সালের আমেরিকান সিভিল ওয়ারের (গৃহযুদ্ধের) ভয়াবহ ছবির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান—যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক। তবে কীভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে সে বিষয়ে তিনি এখনো স্থিরপ্রতিজ্ঞ নন। গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার কাছে ‘খুব ভালো একটি পরিকল্পনা’ আছে। তবে এখনই সেই পরিকল্পনা প্রকাশ করলে তা ‘প্রায় অকার্যকর’ হয়ে যাবে বলেও জানান।
এর আগে, টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো হামলার বিষয়টিকে পাগলামি বলে অভিহিত করেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ‘দৃঢ়ভাবে’ এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। এ ছাড়া, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে—রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সংক্রান্ত মার্কিন নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের হামলার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যা ঘটছে তা পাগলামি, অবশ্যই পাগলামি। আমি শত শত মাইল দূরে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করি। আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এটা কেন করছি? আমরা এই যুদ্ধকে শুধু বাড়িয়ে তুলছি এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ করছি। এটি কখনোই অনুমোদিত হওয়া উচিত ছিল না।’
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার অনুমতি দেন। মূলত তাঁর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেই এই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তবে বাইডেন প্রশাসনের দাবি, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার সেনার উপস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প বাইডেনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও বলেছেন, তিনি মাঝ পথে ইউক্রেনকে ‘ছেড়ে’ যাবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চাই এবং সমঝোতায় পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো (ইউক্রেনকে) পরিত্যাগ না করা। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের দ্রুত সমাধান চান এবং জানান, তাঁর কাছে খুব ভালো একটি পরিকল্পনা আছে। তবে সেটি তিনি এখনই প্রকাশ করতে চান না
নবনির্বাচিত বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই সমস্যার সমাধানে আমার একটি খুব ভালো পরিকল্পনা আছে, কিন্তু আমি যদি এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে শুরু করি, তাহলে এটি প্রায় মূল্যহীন হয়ে যাবে।’ তবে ইউক্রেনের আশঙ্কা, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা মূলত মস্কোর শর্তেই হতে পারে।
বায়ান্ন/পিএইচ