ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাঁধকাটা পানিতে বিপর্যস্ত জনজীবন:ক্ষেপলেন স্থানীয়রা,কর্মকর্তা বলছেন ভালোর জন্য করা

জোবাইর বিন জিহাদী, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০১:০৯:০০ পূর্বাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
কনকনে শীতের রাতে হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে আসা পানিতে চরম বিপর্যস্ত হয়ে উঠে সাতকানিয়ার দুই এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবন।হঠাৎ হাঁটু হাঁটু পানিতে যেন রাতের ঘুম হারাম হয়ে উঠে এলাকাবাসীর।পূর্ব সতর্কতা না করায় বনবিভাগের উপর ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা।তবে অভিযানের স্বার্থে সতর্ক না করা ও সাময়িক সমস্যা হলেও স্থানীয়দের ভালোর জন্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বনকর্মকর্তা।
 
শনিবার মধ্যরাতে কৃত্রিম লেকের বাধঁকাটা পানিতে প্লাবিত হয় সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা।
 
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে থাকা বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর জায়গাকে কৃত্রিম লেক পরিণত করা লেক-এ অভিযানের মাধ্যমে বাধঁকেটে বনভূমি দখলমুক্ত করে বনবিভাগ।বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।মূলত দিনেরবেলা লেকের বাঁধকাটা হলেও মধ্যরাতে লেকের পানি চলে আসে লোকালয়ে।সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ও মাদার্শার কয়েকটি এলাকায় হঠাৎ থইথই পানিতে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে উঠে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন।পানিরস্রোতে কিভাবে নিজেদেরকে সামাল দিবে বুঝে উঠতে না পেরে বনবিভাগকে গালাগাল ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।পরে রাত ১২ টার দিকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে স্রোতের পানি।পূর্ব সতর্কতা ছাড়া এমন কাজ করায় বনবিভাগের কঠোর শাস্তি দাবি জানান স্থানীয়দের একটি অংশ।অন্যদিকে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইন্ধন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন অনেকে।এদিকে বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের সতর্ক না করায় পরিস্থিতি সামালে হিমশিমে পড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনও।
 
স্থানীয়দের কয়েকজন বলেন, বনবিভাগের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের জন্য এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।এজন্য বনবিভাগের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
 
স্থানীয়দের একটি সূত্র জানান, বাঁধকাটার আগে কোন ধরনের সতর্কতা না করায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।মাটিঘরগুলো বিপদের মুখে পড়েছে বেশি।ফসলাদি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
 
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন,বাঁধ কাটার ফলে সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দুইটি ওয়ার্ড ও একটি ওয়ার্ডের আংশিক প্লাবিত হয়।এতে ৬০ টির মতো মাটিরঘর ও দুইটি সুইসগেইট ভেঙ্গে যায় এবং ফসলের প্রায় ৫২ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।
 
বিপর্যস্ত মুহুর্তে প্রশাসনের ভূমিকার প্রশ্নে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তিন টন চাল,কম্বল বিতরণ করেছি।পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার জন্য ক্ষতির পরিমাণ তালিকা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্ব স্ব দপ্তরে প্রেরণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছি।
 
এই ঘটনায় প্রশাসন অবহিত থাকার প্রশ্নে মিল্টন বিশ্বাস বলেন,এই বিষয়ে বনবিভাগ থেকে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের কাউকে অবহিত করা হয়নি।এমনকি স্থানীয় সোনাকানিয়া ইউপি চেয়ারম্যানও অবহিত ছিলেন না।যার কারণে হঠাৎ করে এটা ঘটায় আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি।
 
এদিকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাধঁটা অবৈধ ছিল।লেকের কারণে স্থানীয় কৃষকেরা নিচের জমিগুলোতে ধান চাষ করতে পারছিল না।তবে এটি দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছিল।আমাদের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাতে অভিযান শুরু করি।বিকেল ৩টা থেকে মূলত এটি শুরু হয়েছিল।কিন্তু রাতের দিকে আমরা এটিকে কন্ট্রোল করতে না পারায় ঘন্টাখানেকের জন্য এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
 
আগে থেকে সতর্ক না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রভাবশালী মহল আগে থেকে দখল করে রাখছিল।অভিযানের আগে সতর্ক করা হলে বাঁধটা আমরা তো উচ্ছেদ করতে পারবো না।এতে সাময়িক কিছু ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের উদ্দেশ্য চিন্তা করে করা হয়েছে।স্থানীয় লোকজনের ভবিষ্যতের ভালোর জন্য চিন্তা করে এটা করা হয়েছে।