বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
লেয়াকত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি বরখাস্ত। এস আলমের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন লেয়াকত আলী।
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায়, ভূমি ও জলদস্যুতাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, উপকূলীয় জলদস্যু বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে লেয়াকত আলীকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
দুদক কর্মকর্তা আবদুল মালেক জানান, লেয়াকত ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। লেয়াকত জনপ্রতিনিধি থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। এর বেশির ভাগ সম্পদ তাঁর স্ত্রীর নামে নেন। লেয়াকত ও তাঁর স্ত্রীর নামে আরও সম্পদ আছে কি না, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
মামলার বিষয়ে লেয়াকত আলী জানান, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমি ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমি কারাগারে থাকাকালীন আমার স্ত্রী সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বিগত দুই বছর ধরে দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। স্বৈরাচারী হাসিনার সময়েও আমি নির্যাতিত হয়েছি, এখন স্বৈরাচার পতন হয়েও আমার শান্তি নেই। আমি দক্ষিণ জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছি এমন সম্ভাবনা দেখে মোটা অংকের বিনিময়ে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এই মামলা করিয়েছে। আমি ন্যয় বিচার চাই।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, লেয়াকতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় দুদক গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সম্পদ বিবরণী জমা দিতে নির্দেশ দেন। পরের বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী জমা দেন দুদকে। পরে দুদক যাচাই-বাছাই করে জেসমিন আক্তারের নামে ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার অবৈধ সম্পদ পান। এর মধ্যে রয়েছে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে নগদ অর্থ, ১৬টি দলিল মূলে জায়গা ক্রয় ও ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূলের একটি গাড়ি। স্বামী লেয়াকত আলী জনপ্রতিনিধি থাকাকালে অবৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে সম্পদ গড়েছেন।
লেয়াকত আলী প্রথম দফায় ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গন্ডামারা ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। পরের বার ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৩০-৩২টি মামলার আসামি এবং জেল জুলুমের শিকার বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর বিরুদ্ধে নতুন করে মামলার ঘটনায় বাঁশখালীতে তোলপাড় ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।