আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এখনও তৎপর রয়েছে। তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চায় না। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্থানের অঙ্গরাজ্য করতে চায়। বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নাম করে ও নানান অরাজনৈতিক ইসুকে কেন্দ্র করে নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। তাদের সে চেষ্টা কখনও সফল হবে না। যে উদ্দেশ্যে ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা এখনো বাংলার মাটিতে তৎপর রয়েছে। কারণ, দেশের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের উগ্রযাত্রা আরো বহুদুর এগিয়ে যাবে। কেউ এটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। দেশকে আমরা আর অস্থীতিশীল করতে দিব না।
কৃষিমন্ত্রী শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ও সাফল্যে যে উচ্চতায় উঠেছে তা ধরে রাখতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে সত্যিকার অর্থে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে হলে যেকোন মূল্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী বলেন- নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন করার জন্য আইন করতে হবে। আমাদের সংবিধানে রয়েছে আইন করতে হবে। আমি তাদের সঙ্গে অবশ্যই একমত পোষণ করছি। তবে কোনোদিনই আইনি ভিত্তি ছাড়া এ দেশে নির্বাচন হয়নি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। নোটিশ হয়েছে, সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে। নানাভাবে এ দেশে নির্বাচন হয়েছে। আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন হয়নি। আমরা বলি ’৯১ এর নির্বাচন খুবই স্বচ্ছ নির্বাচন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ নির্বাচন। ২০০৮ সালের নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর স্বচ্ছ নির্বাচন। সেটাই যদি হয় তখন তো আইনই ছিল না। তারপরও তো হয়েছে, যেটাকে আপনারা বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই সংবিধান ১৯৭২ সালে করা হয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এই আইন করেননি কেন? তারাও কিন্তু আইন করেননি। নানা কারণে আইন হয়নি। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি তো নির্বাচন করে ১৯৯১, ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। তখন কি বলেছিলেন, নির্বাচন সঠিক হয়নি- প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন চলাকালে সরকারের সব কিছু পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও কমিশনাররা শপথ নিয়েছেন সঠিক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন সব কিছু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধিনে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে যদি দায়িত্ব পালন না করে এর দায় প্রধানমন্ত্রীর নয়, আওয়ামী লীগেরও নয়। তিনি বলেন, কেউই রাজনীতির বাইরের লোক নয়। সবারই রাজনৈতিক আদর্শ আছে। নিরপেক্ষ কাকে বলবেন। এই দেশের মানুষকে দিয়েই তো কমিশন গঠন করতে হবে। চাঁদ থেকে বা মঙ্গল গ্রহ থেকে তো আর মানুষ নিয়ে আসবেন না?
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ঐতিয্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমাদের হাজার বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপি এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সাফল্য অর্জন বাঙ্গালীদের সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত অর্জন। এই অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলতেন তার হাতে গড়া এই ছাত্রলীগ আর বাংলাদেশের ইতিহাস ও ছাত্রলীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই এই সম্মেলন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ন। দেশ এক ক্লান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেত্রীত্ব তৈরি করবো। সেই নতুন নেত্রীত্ব দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভোধ করবেন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। আমি মনে করি জাতি এখনো ঐক্যবদ্ধ, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে। এই ধারাকে আমরা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে বাংলাদেশ আগামীতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে। কেউ এটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। দেশকে আমরা অস্থিতিশীল করতে দেব না। সারাদেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। এটি আমরা অব্যহত রাখবো।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, ছানোয়ার হোসেন এমপি, সোহেল হাজারী এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে জেলা, উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।