জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনির শিকার হয়ে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাখা ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে ‘শ্যুটার শামীম’ মারা গেছেন।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটেছে বলে সাভারের আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, ওইদিন সন্ধ্যায় গত ১৫ জুলাই দিবাগত রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্যের বাসভবনে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে গণপিটুনি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসার কারণে তাকে স্থানীয়রা ‘শ্যুটার শামীম’ বলে ডাকেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাখা ছাত্রলীগের জুয়েল-চঞ্চল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে শামীম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সে সামনের সারি থেকে অস্ত্র হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইট সংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। তার অবস্থানের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। এরপর সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে দফায় দফায় পিটুনি দেয়। একপর্যায়ে রাত পৌনে ৯ টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের উপস্থিতিতে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল জাবির নিরাপত্তা শাখায় এসে শামীম মোল্লাকে আটক দেখিয়ে নিয়ে যায়।
এসময়, পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।হামলাকারীদের সঙ্গে জাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক মেহেদী ইকবালও অংশ নেয় বলে জানায় শামীম।
এসময়, শামীম আরও জানান, গত ১৫ জুলাই রাতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে তারেক ও মিজান (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে যায়। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে পেট্রোল বোমা, ককটেল, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। হামলার সময় তারেক এক রাউন্ড গুলিও ছোড়ে বলে জানায় শামীম।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাভারের আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা শামীমকে প্রান্তিক গেট থেকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসি এবং পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ আসতে বিলম্ব হওয়ায় নিরাপত্তা শাখায় তাকে গেটের ভিতরে রেখে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এসময় কতিপয় শিক্ষার্থী তালা ভেঙে প্রবেশ করে এবং তাকে নিরাপত্তা অফিসের ভিতরে মারধর করে। নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা তাকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ এসে তাকে আহত অবস্থায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি কারা মূলত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। জড়িতদের শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।