রাজা আসে রাজা যায়ের মতো মন্ত্রী পরিষদও আসে এবং নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সেই পরিষদ ভেঁংগে নতুন পরিষদের অধিস্টান ঘটে নতুন আংগিকে। এই ধারাবাহিকতায় সদ্য অনুস্টিত সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয়েছে। নতুন এবং পুরাতনের সমন্বয়ে এ পরিষদ চাহিদানুগ কেমন ভূমিকা রাখবে সেটি অনাগত সময়ই বলে দেবে।
মন্ত্রী পরিষদশাসিত সরকারে মন্ত্রীরাই হচ্ছেন নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী। তার নির্দেশনায় এবং পরিকল্পনায় মন্ত্রণালয়ের কার্য্যক্রম পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকে গতিশীল করে।অবশ্য প্রধানমন্ত্রী সব কটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ক এবং তদারক। মন্ত্রী পরিষদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার দায়ভার তার উপরই বর্তায়। এ কারণে যাচাই বাছাইপূর্বক প্রধানমন্ত্রীই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী নিয়োগ করেন। তাই রাস্ট্র বিজ্ঞানে প্রধান মন্ত্রীকে তারকাবেস্টিত চন্দ্রের সমতুল্য বলা হয়েছে।
নব গঠিত মন্ত্রীসভায় বিগত মন্ত্রীসভার কয়েকজন মন্ত্রীকে নিজ নিজ মমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পুনরায় দেওয়া হয়েছে তাদের পারফরমেন্সের কারণে। তার বিপরীতে বিতর্কিত এবং অদক্ষদেরকে ছাটাই করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ বলে গণ্য। ছাটাইকৃত মন্ত্রণালয়ের অন্যতম হচ্ছে অর্থ বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয়। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের কার্যক্রম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়তো সন্তুষ্ট ছিলেন না। মাদার মিনিস্ট্রি বলে খ্যাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী মন্ত্রী দেশে কেমন অর্থনৈতিক অবস্থা রেখে গেছেন সেটি বিশ্লেষকরা বলতে পারবেন।শুধু একটি বিষয়ে ইংগিত দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের গুরুত্ব দিয়েছে। পক্ষান্তরে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী কয়েকদিন আগেও বলেছেন--মূল্যস্ফীতি না হলে প্রবৃদ্ধি আসবেনা। তার এই ফর্মূলাতেই কি বাজারে লুটেরাপণার দাপট? বর্তমানে বেসামাল বাজার এবং বাজারি লুটপাটে সমাজের নিম্নবিত্তের মাঝে যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে তার দায়ভার কতটুকু বৈশ্বিক এবং কতটুকু দেশীয় অব্যবস্থার ফসল সেটি বেরিয়ে আসবে চুলছেরা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। তবে দায়ভার এড়ানোর পথনেই অর্থ বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের। মূল্য স্ফীতির যে বোঁজা জাতির কাধে চাপানো হয়েছে তাতে ঘাড় মটকে গেছে সাধারণ ভোক্তা মহলের। এ দুর্গতিকে ফালতো ফর্মুলা দিয়ে ঢাকা দেয়ার নয়। বাজার সিন্ডিকেটের নিকট বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যে নতজানু ছিল সেটি বেকুবেরও বুঝতে বাকী নেই।
আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক শাসনামলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মোহিত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানকে শুধু সংহতই করেননি বরং চৌকষ অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন। যার ফলে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশকে ইমার্জিং টাইগার হিসাবে গণ্য করেছিল। বিদায়ী অর্থমন্ত্রী দেশীয় অর্থনীতিকে কোন পর্যায়ে রেখে গেলেন তা ভবিতব্যই জানান দেবে। এখন আসা যাক বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় প্রসংগে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একসময় চৌকষমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের অধীনে ছিল ।মন্ত্রীর কঠোরতা এবং দিক নির্দেশমায় মূল্যস্ফীতির দানব ও সিন্ডিকেট নড়াচড়া করতে পারেনি। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কড়া নজরদারীতে কৃষি বাজার ছিল স্থিতিশীল। খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতা ছিল আরেক মাইল ফলক। এই দুই মন্ত্রীর বিপরীতে যে দুই গুণধরকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তাদেরতো মহিমা অপার। তারা যে খাদঁ সৃস্টি করে গেলেন সেটি ভরাট করতে কতদিন লাগবে কে জানে?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে সংকট অক্টোপাশের মতো জাতিকে আকড়ে আছে সেটি হচছে বাজারি দৌরাত্ম্য এবং সিন্ডিকেটবাজী। যে বণিক সিন্ডিকেট গজিয়ে উঠেছে সেটি ইস্ট ইন্ডিয়া ওলন্দাজ এবং পাঞ্জাবী চক্রের চাইতেও ভয়ংকর। দেশীয় প্রবৃদ্ধিকে কুক্ষীগত করাই তাদের মূল টার্গেট। তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে প্রশাসন এবং বণিক রাজনীতিক। যার মাশুল গুণছে জমগণ। অন্যদিকে সাবেকী আমলের দুর্ণীতির ধারাবাহিকতা হাল আমলেওতো বিদ্যমান।
তারপরও দেশ যে আগায়নি একথা বলা যাবেনা। তূলনামূলক মানদণ্ডে সাবেকী আমলের চাইতে গত দেড়দশকের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত চৌকষ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষাও টেকসই হয়েছে। এজন্য শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনাই নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে।এজন্য পার্শ নাভিশ্বাস থাকার পরও মানুষ শেখ হাসিনাকেই ভরসাস্থল মনে করেছে কোন বিকল্প না পেয়ে। যতই অপপ্রচার এবং গডডালিকা প্রবাহ থাকুক তারপরও দেশের মানুষ ন্যুনতম ভরসাস্থল অনেষণ করে। সদ্য অনুস্টিত সংসদ নির্বাচনে ৬২ জন নির্দলীয় সাংসদকে ভরসাস্থলও মনে করছে। তারা যদি কার্য্যকর ভূমিকা রাখেন তাহলে নতুন মন্ত্রীপরিষদ জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে পারবেনা। আশা করা যায় গত সংসদের চাইতে নতুন সংসদ প্রাণবন্ত এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।