ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিজয়নগরে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:০৮:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি
টমেটো সাধারণত শীতকালীন সবজি। মূলত তাপমাত্রার কারণেই আমাদের দেশে শীতকালে টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। তবে নৈশকালে তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রীর নিচে থাকলে গ্রীষ্মকালেও টমেটো চাষাবাদ সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক স্থানে গ্রীষ্মকালেও হচ্ছে টমেটোর চাষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এবছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় এখানকার কৃষকরা 'বাহুবলী' এবং 'রাজা' জাতের টমেটোর আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। ভালো ফলন আর বাজারদর ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
 
 
কৃষি বিভাগ সূত্রে প্রকাশ, টমেটো পুষ্টিহুণে সমৃদ্ধ একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, ত্বকের উজ্জ্বলতা, হৃদযন্তের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে সহায়তা করে। এটি কাঁচা এবং রান্না করে উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। এটি সাধারণত শীতকালীন সবজি। কারণ প্রকৃতিতে তখন তাপমাত্রা কম থাকে। গড়ে ২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা টমেটোর ভালো ফলনের জন্য উপযোগী। তবে গ্রীষ্মকালে নৈশকালীন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস'র নিচে থাকলে টমেটোর গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য উপযোগী হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্মকালেও টমেটোর চাষাবাদ হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর হয়েছে বাম্পার ফলন। এবার এই উপজেলায় ৮১ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। প্রায় দশ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে বিজয়নগরে।
 
 
বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের আড়িয়ল গ্রামের কৃষক শাহবাজ আলী জনান তিনি কৃষি বিভাগের সহায়তায় এবছর তিন বিঘা জমিতে 'বাহুবলী' জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে এক লাখ ২০হাজার টাকা। অপরদিকে তিন বিঘা জমিতে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি বাবদ আয় করেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। চলতি বছর টমেটোর বাজার মূল্য বেশি থাকার সুবাদেই তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন বলেও জানান। একই গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া এবং খোকন মিয়া। তিনার দু'জনও স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে তাদের দুই বিঘা করে জমিতে 'রাজা' জাতের টমেটোর আবাদ করে হয়েছেন অপ্রত্যাশিত লাভবান। কৃষক শাহবাজ আলী, কাশেম মিয়া, খোকন মিয়া আরো জানান উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে আমরা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করি। অফিসাররা সময়ে সময়ে আমাদের জমি পরিদর্শন করে টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন এবং কিভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায় সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শ মোতাবেকই আমরা টমেটো আবাদ করে লাভবান হয়েছি। প্রসঙ্গক্রমে তারা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি সংরক্ষণের কোনো কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় মৌসুমে উৎপাদিত সবজি আমাদেরকে কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। তাই তারা জেলায় সরকারিভাবে বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জোর দাবী জানান।
 
 
উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অফিসার মোহা. নুরে আলম জানান, 'টমেটো মূলত এদেশের শীতকালিন ফসল তবে এখন গ্রীষ্মকালেও এর চাষাবাদ হচ্ছে। রাত্রির তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি'র নীচে থাকলে টমেটো গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশী উপযোগী হয়। গড় তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রী টমেটোর ভালো ফলনের জন্য সবচাইতে উপযোগী। তিনি আরো জানান নিয়মিত টমেটো চাষীদের মাঠ পরিদর্শন করে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকা দমন করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব প্রযুক্তি ব্যাবহারে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা দিনদিন বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন।'
 
 
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ জানান, 'বিজয়নগর উপজেলায় এবছর ৮১ হেক্টর জমিতে বিভিন্নন জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। এবার এই উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ২৪০ মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে যার বাজার মূল্য ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিস্ট সকলকে কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।'