ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিদ্রোহীতে নৌকার বিপর্যয়ের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:০৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। তিনটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বিদ্রোহীদের কারণে নৌকা প্রার্থীদের ভাগ্য বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ কঠোর হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের সেসব নেতা বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের এবং তাদের সমর্থক নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় পটিয়া, কর্ণফুলী ও লোহাগাড়া উপজেলার ইউনিয়নগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থককারী ও প্রস্তাবকারীসহ সংগঠনের ২২ নেতাকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

চতুর্থ ধাপে দক্ষিণ চট্টগ্রামে তিনটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নে ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এরইমধ্যে ছয়টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নে মোহাম্মদ সেলিম, বড়লিয়া ইউনিয়নে শাহীনুল ইসলাম সানু ও শোভনদণ্ডী ইউনিয়নে এহছানুল হক। তারা তিনজনই বর্তমান চেয়ারম্যান। এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিজয় বড়ুয়া, পুটিবিলা ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক এবং কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নে দিদারুল আলম দিদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে, কয়েকটি ইউনিয়ন বাদে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাদের কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাগ্য বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২২ নেতাকর্মীকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সংগঠনের আন্দরকিল্লার কার্যালয়ে জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের (এমপি) সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সেসব নেতা কাজ করছেন বা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উর রশিদ এজাজ ও সদস্য জাকারিয়া ডালিম, আশিয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও সদস্য সৈয়দ মাঈনুল হক, কেলিশহরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল দে, জঙ্গলখাইনে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সবুজ, উপজেলা যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ দিদারুল আলম, হাইদগাঁওয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম জসিম, ধলঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শফিউল আলম (বাদশা), জিরিতে বর্তমান চেয়াম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম সওদাগর ভোলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম বাবুল, কোলাগাঁওয়ে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল হক, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাশেম রাসেল, ছনহরায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফর।

লোহাগাড়া উপজেলার বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-চুনতি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনিছ উল্লাহ, চরম্বায় ইউনিয়নে তাঁতী লীগ সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, পদুয়ায় লোহাগাড়া উপজেলা মৎস্যজীবী লীগ সহ-সভাপতি আকতার কামাল পারভেজ, কলাউজানে মহানগর ছাত্রলীগ সাবেক নেতা মোহাম্মদ ইয়াছিন।

কর্ণফুলীর উপজেলার বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-জুলধায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহম্মদ, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মুছা, চরক্ষ্যায় কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ আলী, শিকলবাহায় কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন উপজেলার ২২ জনকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পেলে চিঠি দিয়ে তাদের বহিষ্কারের তথ্য জানানো হবে। ভবিষ্যতেও তারা বেইমান হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।