ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানবপাচার থেকে তেল পাচারে কক্সবাজার

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী (কক্সবাজার): | প্রকাশের সময় : বুধবার ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৮:২৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মালেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচারে খ্যাতি থাকলেও এখন তেল ও ভোগ্যপণ্য পাচারে নাম উঠেছে। সমুদ্র পথে মিয়ানমারে জ্বালানি তেল অকেটন, ডিজেল, ভোজ্য তেল সয়াবিন পাচার আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। সেই সাথে পাচার হচ্ছে পেঁয়াজ, রোশন, চাল, ডাল, মরিচ সহ নানা খাদ্য পণ্যও। আর তাতেও রোহিঙ্গা জড়িত এমন তথ্য আসছে প্রশাসনে। গত ১ মাসে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে কতিপয় চোরাকারবারী জ্বালানী তৈল অকটেনসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অবৈধভাবে চোরাচাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের খবর পেয়ে র‌্যাব এর বিভিন্ন ইউনিট অভিযান চালায়। এতে করে মিয়ানমারে পাচারকালে ১০ হাজার লিটার অকেটন, ২০০ লিটার ডিজেল ও প্রায় ৪ হাজার লিটার সয়াবিন তেল সহ ৩০ পাচারকারিকে আটক করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি পাচার রোধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বিশেষ সভা করেছে। সাধারণ মানুষ কক্সবাজারকে মানবপাচার ট্যাগ থেকে এখন তেল পাচারের জায়গা হিসাবে টয়াগ লাগাতে হবে বলে বাঁকা চোখে কথা বলছে।

 

গত বুধবার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জ্বালানি ও ভোজ্য তেল বিক্রিকারি প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা প্রদান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরধারী বৃদ্ধি সহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরানের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোষ্টগার্ড, জেলার ৩৫ টি পাম্প, ৩০ টি প্যাক পয়েন্ট ও ৮ টি বার্জ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে রাজধানী ইয়াঙ্গুনের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। বিপুল অর্থ দিয়েও পশ্চিম আরাকানের আকিয়াব, ভুচিদং, রাশিদং ও মংডুতে নিত্যপণ্য মিলছে না, যা-ও পাওয়া যাচ্ছে, তার চড়া মূল্য তাই তাদের স্থানীয় মুল্য থেকে কম মুল্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে জ্বালানী তেল, ভোজ্য তেল সহ বিভিন্ন ভোগ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিচ্ছে তারা।

 

সমুদ্র উপকূলের কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, নুনিয়ারছড়া, মাঝেরঘাট, খুরুশকুল, চৌফদণ্ডী, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি; উখিয়ার ইনানী, সোনারপাড়া; টেকনাফের শ্যামলাপুর, লম্বরী, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ; মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং কুতুবদিয়ার সমুদ্র উপকূলের অন্তত ২৫টি পথ ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। 

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, অনুষ্ঠিত সভায় জ্বালানি ও ভোজ্য তেল বিক্রিকারি প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তাহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা প্রদান। কে ক্রয় করছেন, কত পরিমাণ ক্রয় করছেন, কতদিন পর ক্রয় করছেন তালিকায় তা উল্লেখ থাকবে। যে তালিকাটি উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন বরাবরে পাঠাবেন। তালিকায় কোন প্রকার অসঙ্গতি থাকলে তার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকূল পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরধারী বৃদ্ধি সহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।