ঢাকা, মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ই কার্তিক ১৪৩১

যে কারণে দোয়া কবুল হয় না

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০৬:০০ পূর্বাহ্ন | ধর্ম

দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা খুশি হন। তার বান্দা তার কাছে মনের আশা-আকাঙ্খা জানাবে এটাই তিনি চান। কেউ যদি তার কাছে না চায় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (তিরমিজি ৩৩৭৩)

অপরদিকে অনেকে অনেক দোয়া করলেও সেই দোয়া কবুল হয় না। কারণ আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মতো চাইতে হবে। চাওয়ার মতো ব্যক্তি হিসাবেও প্রস্তুতি নিতে হতে হবে।

দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ

এক. পানাহার ও পোশাক হালাল না হওয়া

হারাম খাওয়া ও হারাম উপার্জনের কারণে মানুষের দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উসকোখুসকো, চেহারা ধুলোবালি মাখা। তিনি হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছেন, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দোয়ায় সাড়া দেওয়া হবে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কীভাবে সে সম্পদ অর্জন করল, হালাল উপায়ে, নাকি হারাম উপায়ে!’ (বুখারি ২০৮৩)

অন্য হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম ২২৩৬)

দুই. দোয়ায় ইখলাস ও নিষ্ঠাহীনতা

মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। রসুল (সা.) বলেছেন, দোয়াও একটি ইবাদত। (আবু দাউদ ১৪৭৯) ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য।

তিন. গুনাহ করা ও রক্তের বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ (অপরাধ)। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন।

(১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন। (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন। (৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূর করে দেন। (আত-তারগিব ১৬৩৩)

চার. গুনাহে অবিচলত থাকা

দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, গুনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গুনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহও তাদের বদলান না।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয়। তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই। (সুরা রাদ, আয়াত : ১১)

 পাঁচ. দোয়ায় অমনোযোগী হওয়া

দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি ৩৪৭৯)

 ছয়. দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া করা

রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি তিনি তাড়াহুড়া না করেন এবং এ কথা না বলেন যে আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ (বুখারি ৬৩৪০)

সাত. সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ না করা

রসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ্ তোমাদের ওপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তার কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের দোয়া সাড়া দেওয়া হবে না।’ (তিরমিজি ২১৬৯)

আট. দ্রুত ফল না পাওয়ায় দোয়া বন্ধ করে দেওয়া

রসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে— ‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলো না।’ (সহিহ বুখারি ৬৩৪০)

নয়. মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা

তিনি দোয়া সাথে সাথে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেয়ার জন্য রেখে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে দিয়ে দেন অথবা তার দোয়াকে তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা দোয়ার পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।’ (তিরমিজি ৫/৫৬৬; আহমাদ ৩/১৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিকভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।