রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করার প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদে থাকাকালীন এ অনিয়ম করেন।
অভিযোগ ওঠে, ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব প্রকল্পের প্রায় ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। সোমবার (৬ জুন) ইউজিসির তিন কর্মকর্তা রুয়েটে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাইয়ে অনিয়মের সত্যতা পান।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার রিপোর্ট দেওয়ার পরেও প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা জমা ছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা জমা ছিল। বর্তমানেও অ্যাকাউন্টটি চালু রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ৫২ লাখ টাকা জমা রয়েছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার রিপোর্ট ইউজিসিতে প্রদান এবং প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করার পরেও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন গুরুতর অনিয়ম। অ্যাকাউন্টটি বন্ধ না করাও বিধিবহির্ভূত কাজ।
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে আমরা প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল আলীমের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আমি মনে করি, এ বিষয়গুলো জাতির সামনে প্রকাশ হওয়া উচিত। যদি কেউ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তিনি আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। আর যদি অনিয়ম না করেন তাহলে সেটি প্রমাণ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধাদি সৃষ্টিকরণ-প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালুকরণ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের জন্য ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট।
তখন ব্যাংকের হিসাবে ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা জমা ছিল। সেখান থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকের হিসাবে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ওই স্থিতি থেকে ৪৯টি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ টাকা সরিয়ে নেন অধ্যাপক আব্দুল আলীম।
রূপালী ব্যাংকের রুয়েট শাখার হিসাব নম্বর-৩৭২৩০২০০০০৪৩৮ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকল্প সমাপ্তি ও পরিদর্শন শেষ হয় ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তখন ওই হিসাব নম্বরে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকার তথ্য ইউজিসিকে জানাতে হবে। কিন্তু সেটি না জানিয়ে ২২ মার্চ ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৭ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন হিসাব নম্বরটিতে অবশিষ্ট রয়েছে প্রায় ৫২ লাখ টাকা।