শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ’ বাস্তবায়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করছে তারা।
এদিকে, দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে সরকার। আগামীকাল সোমবার (২১ মার্চ) এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। প্রকল্পের প্রথম অংশে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলিয়ে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান। এটি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদুল আলম।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির। এখানে আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেন পরিবেশকে সুরক্ষা করা যায়। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সালফার, নাইট্রোজেন ও বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালস দ্বারা। এই তিনটিই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি।
এম খোরশেদুল আলম আরও বলেন, আমরা পরিবেশকে এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছি যে, কেউ যদি না বলে এটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আপনি বুঝতেও পারবেন না। কয়লার একটা ডাস্টও এখানে পাবেন না।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা হলো- বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে। তিনি জানান, দুটো লাইনে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন হবে। একটি পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত। আরেকটি খুলনা হয়ে যশোর পর্যন্ত।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ সুবিধা পেত ৪৭ শতাংশ মানুষ। ২০২২ সালে এসে এটি শতভাগে উন্নীত হয়েছে। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎসেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মুজিববর্ষের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা ছিল আমাদের। আমরা সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। একটা সময় অনেকে এ নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন, আজ কিন্তু সেটি বাস্তবতা। পুরো জাতি দেখতে পাচ্ছে ও এর সুফল ভোগ করবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে এ অঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য গতি পাবে। শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের একটা স্বপ্নের প্রকল্প উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সোমবার। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নানাভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। এই প্রকল্পে অনেকেই কাজ করছেন এবং এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আরও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়েছে। সে কারণে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পরে কুয়াকাটাকেন্দ্রিক পর্যটনেরও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সামগ্রিকভাবে মানুষ খুব আশাবাদী, অনেক খুশি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন শেখ হাসিনা, তা আজ দৃশ্যমান। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতের সময় মানুষ যে অন্ধকার যুগে ছিল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তা থেকে বেরিয়ে শতভাগ আলোর পথে এসেছে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা, যে দায়িত্ব- তা পালনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সে পথেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আগামীকাল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও উন্নয়নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।