![](https://dainikbayanno.com/storage/img-20241215-142519.jpg)
রাঙামাটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও পর্যটকপ্রিয় স্থান হিসেবে সুপরিচিত। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, সাজেকের পাহাড়, কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির কারণে রাঙামাটি এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলো সারা বছর ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি, হ্রদের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য, যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
পাহাড়ের সবুজাভ আচ্ছাদন, প্রবাহমান ঝরনা, কাপ্তাই হ্রদের শান্ত জলরাশি এবং সাজেকের মেঘে ঘেরা পাহাড়ি পথের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকরা ভিড় জমায়। সাজেক, যা ‘রাঙামাটির মেঘের রাজ্য’ নামে পরিচিত, শীতের সকালে মেঘে ঢাকা পাহাড়ের ভিউ এবং স্নিগ্ধ বাতাস ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ভ্রমণ, ঝুলন্ত সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ানো, পাহাড়ি এলাকায় ট্রেকিং এবং কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কে পাহাড়ের সাথে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা সবকিছুই শীতের মৌসুমে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা এনে দেয়। যদিও অন্যান্য মৌসুমেও পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য থাকে, কিন্তু প্রতিবছর শীতের মৌসুমে বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদ ও সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজারো পর্যটক এখানে আগমন করেন।
এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও শীতের শুরুতেই হ্রদ, পাহাড় ও ঝর্নার দেশ পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে প্রত্যাশিত হারে পর্যটকদের আগমন ঘটছে। তাছাড়া এবার শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের সঙ্গে বিজয় দিবসের ছুটি মেলায় পাওয়া যাচ্ছে টানা অবকাশ। এতে পর্যটকের চাপ বাড়ছে আরও কয়েক গুণ। ইতোমধ্যে সাজেক ও জেলা শহরের অনেক হোটেল-মোটেল, ইকো-রিসোর্ট ও কটেজ শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
গত কয়েকদিন ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু এলাকায় ঘুরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ও কোলাহল যুক্ত জীবন থেকে কিছুটা দূরে থাকতে প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি রাঙামাটিতে ছুটে আসছেন সবাই।
ঢাকা থেকে সপরিবারে ঘুড়তে আসা তৌহিদ ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর মাস বছরের শেষ সময় বাচ্চাদের ফাইনাল পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। সেই সাথে আমিও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে বিজয় দিবসের ছুটি পেয়েছি। তাই ছুটির এ দিনগুলোতে রাঙামাটিতে ঘুরতে চলে এসেছি। রাঙামাটির পাহাড়, হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু সবকিছুই ভালো লেগেছে। সবকিছুই উপভোগ করার মতো। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে ভালোই লাগছে।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, গত কয়েকদিনে রাঙামাটিতে বেশ পর্যটক এসেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ছে। আশা করছি, এই শীতের মৌসুমে ভালো পর্যটক আসবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়টাও বাড়বে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির তথ্যমতে জানা যায়, সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। রেস্তোরাঁ আছে ১৪টির বেশি। সবগুলোতেই পর্যটকদের ভিড়। শুক্রবার ও শনিবার সাজেক পর্যটকে ভরপুর ছিল। সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ২দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করছেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পর্যটকের সমাগম হয়েছে এখানে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাজেকের সব হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট বুকিং রয়েছে।
সাজেক ভ্যালির অবকাশ ইমানুয়েল ইকো রিসোর্টের ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, সাজেকে গত কয়েকদিনে বিপুল পরিমানে পর্যটক এসেছে। মূলত ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাটা বাড়তে শুরু করেছে। হোটেল-মোটেলগুলো ভালো বুকিং হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের রিসোর্টের সকল কক্ষ প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে