ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন মতিয়ার রহমান

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৩ জুন ২০২৩ ০১:১৫:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

সম্মেলনের প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার (২১ জুন) রাতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু'র স্বাক্ষরিত পৃথক প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে মো. মতিয়ার রহমান বিশ্বাস ও এম. আব্দুল হাকিম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আজম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অহিদুজ্জামান ইকুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে নাসির খান, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু, শামীম হোসেন মোল্লা, ব্যারিস্টার তানভীর হাসান জিসান হাই ও সদস্য পদে সরোয়ার জাহান বাদশার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৮ নভেম্বর ৭ বছর পর শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর একই দিনে ১৬ বছর পর শৈলকুপা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়।

সভাপতি নির্বাচিত হওয়া মতিয়ার রহমান বিশ্বাস উপজেলাজুড়ে একজন ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির বিনয়ী মানুষ হিসেবেই পরিচিত। ১৯৮৩ সাল থেকে আওয়ামী রাজনীতির পথচলা, মাঝে কয়েকবার ইউপি সদস্য, চারবার চেয়ারম্যান ও দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মাঝে শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়কের দায়িত্বও পান। এরপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে কমিটি ঘোষণার দিনক্ষণ শুরু হয়। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কে হচ্ছেন সভাপতি, কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা নেতা ছিলেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস। এরমাঝে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছেন আড়ালে থাকা কেউ কেউ। তবে সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তিনিই হলেন সভাপতি। অজোপাড়া গা থেকে শুরু তার, এখন তিনি নেতৃত্ব দিবেন পুরো উপজেলার আওয়ামী লীগকে।

মতিয়ার রহমান বিশ্বাসকে সভাপতি নির্বাচিত করায় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল কাদের এম. পি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম. মোজাম্মেল হক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল হাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সহ সবাইকে ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ ও তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সংগ্রামী সালাম, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া, সহযোগিতা ও পরামর্শ চেয়েছেন যেন তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত করতে পারেন।

জন্ম ও রাজনৈতিক পরিচয়:
তিনি ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের হুদা কুশবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ আব্দুর রশিদ বিশ্বাস, মাতার নাম সোনাই বিবি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭৭ সালে মেট্টিক পরীক্ষায় পাশ করে শৈলকুপা ডিগ্রী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়ে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৪-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার ইউ পি সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৪-১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২-২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছর পরপর ৪ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ও একই সাথে শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত বিপুল ভোটের ব্যবধানে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।  ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট সরকার (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেক ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এলাকায় টিকতে না পেরে তার ইউনিয়নে আশ্রয় নেই। এজন্য ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে চলে ভাংচুর, লুটপাট ও হত্যা। ২০০১ সালের ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকে ঈদুল আজহার পরেরদিন পর্যন্ত ২ দিন ব্যাপী শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিএনপির সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের হুদা কুশবাড়ীয়া ও কুশবাড়ীয়া গ্রামে এসে অতর্কিত হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। ঐ সংঘর্ষে কুশবাড়ীয়া গ্রামের দুলাল খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দুলাল খান তার আপন মামাতো ভাই। তখন শৈলকুপ্ উপজেলার অনেক ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ঢাকা ও ঝিনাইদহে আশ্রয় নেই। কিন্তু মতিয়ার রহমান বিশ্বাস সেই ভয়াবহ দুর্বিষহ সময়ে লড়াই সংগ্রাম করে এলাকায় টিকে ছিল এবং ২০০৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তাকে জোরপূর্বক চেয়ারম্যান পদে হারিয়ে দেয়া হয়। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আবার চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন, এরপর ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ৮ নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ছোট ছেলে মো. দিনার বিশ্বাস শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

এদিকে মতিয়ার রহমান বিশ্বাস শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা আসার সাথে সাথে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সাধারণ মানুষ। মিষ্টি বিতরণ হয় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে।