ছাত্র-জনতাকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাধ্যমে কিছু লোক একটা গোলমাল লাগানোর জন্য ইন্ধন যোগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার (১০ আগস্ট) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পত্রপত্রিকায় আসতেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হইতেছে। কী জন্য তাদের নিয়ে টানাটানি করতেছে, তারা কি দেশের মানুষ না? তোমরা (শিক্ষার্থী) দেশ রক্ষা করতে পেরেছ, কয়েকটা (সংখ্যালঘু) পরিবার রক্ষা করতে পারবা না!’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার সমালোচনা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কষ্ট লাগে সেও তোমাদের সঙ্গে ছিল, তার ছেলে তোমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখে তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, লুটপাট কারা করতেছে? কিছু ইচ্ছে করে, আর হলো অন্যের মদদে; যারা ইন্ধন যোগাইতেছে একটা গোলমাল লাগায়ে দেওয়া। গোলমাল লাগাতে পারলে তাদের খুব মজা। সব সময় লেগে আছে তোমাদের আটকানোর জন্য। বলবা কেউ ছুঁতে (সংখ্যালঘুদের স্পর্শ) পারবা না, আমরা আছি।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, হিন্দু পরিবার, খ্রিস্টান পরিবার, বৌদ্ধ পরিবার যত আছে বলবা, কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবা না। তারা আমার ভাই, আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি, একসঙ্গে থাকব। পুরো বাংলাদেশ একটা পরিবারের মতো। এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নাই কিন্তু। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার আর নাই।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে আবু সাঈদের বাড়িতে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে আবু সাঈদের বাড়ির ভেতরে যান। আবু সাঈদের বাড়ির আঙিনায় দীর্ঘ সময় বসেন এবং তার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের সান্ত্বনা দেন।
আবু সাঈদের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে পতাকা উত্তোলন করেন।
এ সময় ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
গত ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলির মুখে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নিরস্ত্র আবু সাঈদ। গুলির মুখে তার এই বুক পেতে দেওয়ার দৃশ্য দেশে ও বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন জোরদার করার অনুপ্রেরণা দেয়।