সিলেটের শ্রমিকদের প্রিয়মুখ প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ। তিনি সিলেট জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি। প্রায় এক যুগ এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ৪৫ বছরের রাজনীতিতে নানান ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে চলেছেন সেই ১৯৭৫ সাল থেকে। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু করা এই নেতা এখন জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি।
রাজনীতির চলমান জীবনে তিনি তিনটি কষ্ট বহন করে চলেছেন। যে কষ্টের প্রথমটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি সরাসরি দেখেননি। দুই নম্বর কষ্ট হচ্ছে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। তিন নম্বর কষ্ট হচ্ছে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের পর কঠোরভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। এই না পারার পেছনের কারণ হচ্ছে বয়সের কারণে তিনি এই অধ্যায়ের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেননি।
এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন সিলেট নগরবাসীকে নিয়ে। এই নগরের নগর পিতা হতে চান। এজাজুল হক বলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বাকি ৬ মাসের মতো। এই নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতায় আসতে চান দলীয় প্রতীক নিয়ে। দলের কাছে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনের মাঠে নামবেন।
এজাজুল হক এজাজের রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নানান তথ্য। এজাজুল হকের পরিবারটি একটি রাজনৈতিক পরিবার। স্বাভাবিকভাবে স্কুল জমানা থেকে তিনি রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি নবম শ্রেণিতে অধ্যায়ন করতেন। ১৫ আগস্ট সকালে পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের কাছে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। মানসিকভাবে আঘাত পান তিনি। এই হত্যকান্ডের মধ্য দিয়ে দলটির উপর নেমে বিপর্যয়ের আঘাত। এই বিপর্যয়ের মধ্যেই এজাজুল হক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। ১৯৭৭ সালে এমসি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। এসময় ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতারা আসেন। যা ছিল গোপন। সামরিক শাসক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন গোপনে। ১৯৮০ সালে রাজধানীর রমনা গ্রিনে অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সিলেটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই সম্মেলনে যোগ দিতে ট্রেনে করে ঢাকায় যান। এই দলে এজাজুল হকও ছিলেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মিছিল করে সম্মেলনস্থলে গিয়েছিলেন এই দলটি। এই সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের ওইসময় কারাবন্দি ছিলেন। এই সম্মেলনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন এজাজুল হক এজাজ।
দলীয় সুত্র জানায় ১৯৮৩ সালে এজাজুল হক এজাজের লেখাপড়া শেষ হয়ে যায়। সরে দাড়ান ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে। এ বছরই তিনি ঢাকায় চলে যান। বসবাস করতেন মিরপুরে। ১৯৮৩ সালে সামরিক সরকার শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে উঠে। শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন এজাজুল হক। বিক্ষোভের উপর হামলা করে সামরিক সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আন্দোলনকারীদের পাকড়াও করে রাজপথে ফেলে ব্যাপক পেটানো হয়। এজাজুল হক এজাজও রক্ষা পাননি এই নির্যাতন থেকে। আন্দোলনকারীদের পাকড়াও করে গাড়িতে তোলা হয়। এজাজকেও তোলা হয় গাড়িতে। কিন্তু একজন সৈনিক গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন এজাজকে। মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় এজাজ নাজুক অবস্থায বাসায় ফেরেন। কিন্তু ওইদিন মিরপুর এলাকায় কার্ফিউ জারি করা হয়। একজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় মিরপুর ছেড়ে চোরাগলি পথে খিলগাঁও গিয়েছিলেন তিনি। খিলগাঁও গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছিলেন তিনি।
খোঁজ নিযে জানা গেছে, এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে নানানভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন এজাজ। ১৯৮৬ সালে জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের আহŸানে শ্রমিক রাজনীতিতে যোগ দেন এজাজুল হক এজাজ। ওই বছরই সম্মেলনের মাধ্যমে শহর শ্রমিকলীগের দায়িত্ব লাভ করেন তিনি। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ।
দলীয় সূত্র জানান, সর্বদলীয় ব্যানারে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছিল। সর্বদলীয় অধিকাংশ মিটিং জাসদ নেতা লোকমান আহমদের বড়বাজারস্থ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হতো। একদিন ওই বাসভবনে সর্বদলীয় মিটিং ছিল। এজাজুল হক এজাজও ওই মিটিংয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বড়বাজার এলাকায় যাওয়ার পর দেখতে পান কয়েকটি গাড়ি দিয়ে রাস্তা ও বাড়ি ব্যারিকেড দেয়া। ব্যারিকেডের কারণে এগুতে পারেননি। পরে তিনি জানতে পারেন ব্যারিকেড দিয়ে সর্বদলীয় নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে জান্তা সরকারের বাহিনী। এরশাদ পতনের চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের প্রায় প্রতিটি মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন এজাজুল হক এজাজ।
দলীয় সূত্র জানায় নানান ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলার মধ্যে এগিয়ে যাওয়া এজাজুল হক এজাজকে চরম মাশুল দিতে হয় ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর। এজাজের বাসায় কয়েক দফা ককটেল হামলা হয়েছে। ভাঙ্গচুর হয়েছে ঘরবাড়ি। একে একে ৮টি মামলার আসামি করা হয় এজাজকে। কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয়। এই বিপর্যয়ের মধ্যেও তিনি সিলেট জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এখনো তিনি জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক কর্মকান্ডে এজাজুল হক এজাজ নানানভাবে অবদান রাখছেন। পারিবারিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। পারিবারিকভাবে সামজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গঠন করা হয়েছে ফজলুল হক ফাউন্ডেশন।
করোনাভাইরাস প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পরেন। সিলেটও এই প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত ছিলো না। শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। খাদ্যাভাব দেখা দেয়। অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হয়। প্রতিদিনই কর্মহীন মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ওই সময় এজাজুল হক অর্থিৈনত সংকটে ছিলেন। তিনি তাঁর এলিয়ন ব্রান্ডের কারটি বিক্রি করে দেয়। ওই অর্থ নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ান। একাকি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ৪০০ পরিবারের একটি তালিকা তৈরি করেন। ওই তালিকা ধরে প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। দুই দফায় তিনি ওই সহায়তা বিতরণ করেছেন। এছাড়া মধ্যবিত্ত বেশ কয়েটি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের ঘরে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।
এ বছরের সিলেটের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যাকবলিত সর্বত্র ছুটে গেছেন এজাজুল হক। ব্যক্তিভাবে, পারিবারিক ফজলুল হক ফাউন্ডেশন ও দলীয়ভাবে বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায হাত বাড়িযে দিয়েছেন। প্রথমে বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরে বন্যার্ত মানুষজনের মধ্যে বিতরণ করেন খাদ্য সহায়তা।
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এজাজুল হকের জীবনে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দারিদ্রতা নিরসনে মতস্য খামার, গবাদি পশুর খামারও করে দিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুসারী এজাজুল হক এজাজ জানান,বঙ্গুবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন এদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সততার উচ্চ শিখরে অবস্থান করে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও দেশ পরিচালনায় প্রজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছেন জননেত্রী। যা দেশ বিদেশে সমাদৃত। এসবকর্মকান্ডের একজন কর্মী হওয়ায় নিজকে নিয়ে গর্ববোধ করেন এজাজুল হক এজাজ।