সেকেলে পদ্ধতিতেই চলছে জাবির পরীক্ষা অফিসের কার্যক্রম। আধুনিকায়ন না করায় কাজ চলছে ধীরগতিতে। যার ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা অফিসের আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যেকোনো পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য প্রথমে পরীক্ষা অফিস থেকে ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। ফর্ম পূরণের পর সেই ফর্মে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও হল প্রভোস্টের সাক্ষর নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসের পরীক্ষা শাখা থেকে সাক্ষর নিতে হয়। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে সমস্ত কাগজ জমা দিতে হয়। সম্পূর্ণ প্রসেস শেষ হতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন দিন কখনো কখনো আরও বেশি। আবার বেশিরভাগ সময়ই দুপুরের পরে গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাওয়া যায় না।
একই অবস্থা রেজাল্টের কপি তোলার ক্ষেত্রেও। হল প্রোভেস্টের স্বাক্ষরিত কপি জমা দেয়ার মাস পার হলেও পাওয়া যায় না ফলাফল। আর অফিসে তারিখের পর তারিখ পার হয়। আবার অনেক সময়ই ফলাফলে এমনকি নামের বানানেও গরমিল পাওয়া যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, একাধিকবার আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্যকে জানানো হলেও তারা তো কোনো পদক্ষেপ নেয় নি বরং নিজেদের মদদপুষ্ট লোক নিয়োগ দিয়েছে। এতে আরোও ধীরগতিতে হচ্ছে কার্যক্রম। যার জন্য ভোগান্তিতে পড়ছি আমরা। আমরা চাই এইসকল সেকেলে ব্যবস্থা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়নের স্বার্থে অটোমেশনের আওতায় আনা হোক শিক্ষা অফিসকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, আমরা আধুনিক যুগের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললেও আমাদের পরীক্ষা অফিস চলছে সেকেলে নিয়মেই। এখানে পদে পদে ভোগান্তি। একটি স্বাক্ষরের জন্য ছুটতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘন্টা, এক অফিস থেকে অন্য অফিস। আবার দুপুর পেরিয়ে গেলেও তাদের লান্স টাইম শেষ হয় না। একটি পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য আমাদের তিন থেকে চার দিন সময় দিতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশনের আওতায় আনা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান প্রীতি বলেন, জাবি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানিত বিদ্যাপীঠ হওয়া সত্ত্বেও, একাডেমিক কার্যক্রম এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কাগজপত্রের কাজগুলো এখনও ডিজিটালাইজড হয়নি। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদেরকে দুই-তিনদিন সময় নিয়ে হল, বিভাগ, ব্যাংক, রেজিস্ট্রার অফিস এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে ঘুরতে হয়। এছাড়াও, মার্কশিট ও সনদপত্র সংগ্রহ করতে ন্যূনতম ৩০০ টাকা ফি দিতে হয়। সম্প্রতি, একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ তুলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল, কারণ টাকা জমার স্লিপ হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে জানানো হয় যে, স্লিপ ছাড়া কোনো ডকুমেন্ট দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও জমা দেওয়ার পরও প্রায় এক মাস পরে কাগজ পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এর কারণ হিসেবে প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি ও সময়ক্ষেপণের কোনো যৌক্তিকতা নেই এবং এর দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রশাসনিক অসংগতি এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানাই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কাগজপত্রের কাজগুলোকে ডিজিটালাইজড এবং স্বচ্ছ করার জন্য অটোমেশন চালু করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মো সালাহউদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা। আমরা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা অফিসের নামে বেশকিছু গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়েছে। আমরা সেইসকল অভিযোগকে আমলে নিয়েছি। আগামী ২ অক্টোবর আমি নিজে তাদের সাথে বসে কথা বলব। একইসাথে ফর্ম পূরণ, ফলাফল প্রণয়নসহ সকল বিষয়ের আধুনিকায়ন ও অটোমেশনের দ্রুত করার বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করব।’