দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টায় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে আদালত খালেদা জিয়ার করা আপিল মঞ্জুর করে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার আদেশ বাতিল করেন।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার একটি বিশেষ আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। এই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও আরও তিনজন আসামি ছিলেন। তারা হলেন- বেগম খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সহকারী মো. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করেন।
বুধবার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতিরা জানান, আপিলের সব পয়েন্ট এবং উপস্থাপিত প্রমাণাদি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, মামলার পক্ষে উপযুক্ত সাক্ষ্য বা আইনগত ভিত্তি নেই। আদালত বলেন, "আমি আপিলটি লাইন বাই লাইন পড়েছি এবং এভিডেন্সগুলো বিশ্লেষণ করেছি। যা উপস্থাপন করা হয়েছে তা আইনগত ভিত্তিসম্পন্ন। তাই আপিল মঞ্জুর করা হলো।"
মামলার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন রায়ের পর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, "এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিচারিক আদালতে যে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি সঠিক ছিল না।"
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পরের দিন, ৬ আগস্ট, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তির পর খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিলের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয় এবং সেটি পর্যালোচনা শেষে আজ চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা ছিল বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলাগুলোর মধ্যে একটি বহুল আলোচিত মামলা। এই মামলার রায় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো এবং এটি দেশের আইনের শাসনের প্রতি আস্থা বাড়াবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।#