আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে বিনা প্রতিদ্ধন্দ্বিতায় নৌকার জয় হলেও নির্বাচনকে ঘিরে অন্যন্য ইউনিয়ন গুলোতে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে সহিংসতা। রায়পুর, বরুমচড়া, সদর,হাইলধরসহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা,নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেওয়া সহ ঘরবাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরূদ্ধে।
গত ১৯ ডিসেম্বর (রবিবার) প্রতিক বরাদ্দের পর সন্ধায় সদর ইউনিয়নের জয়কালী বাজার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শহিদ এর সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থী অসিম কুমার দেবের সমর্থকদের বিরূদ্ধে। অবশ্য এই বিষয়ে অসিম কুমার দেবের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,আমার সমর্থকরা কারো উপর হামলা করেনি।
২০ ডিসেম্বর (সোমবার) ফেইসবুকে স্টাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থী জানে আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিন শরীফের সমর্থকদের সাথে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। এই বিষয়ে উভয়ের সাথে কথা বললে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিন শরীফ বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর আমার লোকজন নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিজ চৌধুরীর নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এতে আমার ১০ থেকে ১৫ জন লোক আহত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জানে আলম জানান, মাদক নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় মনির নামে আমার এক সমর্থককে আমিন শরীফের লোকজন হামলা করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেলে নির্বাচনী প্রচারণায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
২১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের তেকোটা, পালের হাট বাজার এলাকায় গণ সংযোগকরাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তাহের এর উপর হামলা এবং তার নির্বাচনী প্রচরাণায় বাঁধা প্রদান করে মাইক ভেঙ্গে ফেলায় নৌকা প্রার্থী'র সমর্থকের বিরূদ্ধে থানায়,রিটার্নিং অফিসার এবং ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তাহের।
২৩ ডিসেম্বর ( বৃহস্পতিবার) বরুমচড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন এর নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা প্রদান করে মাইক ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী'র সমর্থকের বিরূদ্ধে।
পরদিন ২৪ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বেলা একটায় উপজেলার পশ্চিম বরুমছড়া শাহজীপাড়া জামে মসজিদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছোটবোনসহ উভয়পক্ষের ১১ জন সমর্থক আহত হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে আমার বোনসহ সমর্থকদের নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাই। দুপুরে জুম্মার নামাজ আদায় করতে মসজিদে ঢুকলে ওই সময় প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। মসজিদের বাইরে থাকা আমার বোনকেও তারা মারধর করে আহত করেন।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সামশুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন ধরে শাহদাত হোসেন চৌধুরীর সমর্থকরা ফেসবুকে উস্কানীমূলক পোস্ট দিচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে একটু হাল্কা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় আমার সমর্থকও আহত হয়েছে।
একইদিন রাতে নৌকা প্রতিকের নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে মাইকভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ উঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের সমর্থকদের বিরূদ্ধে।
এইভাবে পোস্টার,ব্যানার ছিঁড়াছিঁড়ি ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে একে অন্যের উপর কাঁদা ছুটাছুটি। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছাড়াও উপজেলার বৈরাগ, চাতরী,হাইলধর ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের মধ্যেও পোস্টার ব্যানার ছিঁড়াছিঁড়ির একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সায়্যিদ মোহাম্মদ আনোয়ার খালেদ বলেন,আমাদের কাছে নির্বাচনি প্রচারণায় সহিংসতার বিষয়ে যে অভিযোগ গুলো আসছে ওইগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, নির্বাচনি সহিংসতা নিয়ে একাধিক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি)'র নেতৃত্ব অনেক জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা রোধে, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী ২৭ ডিসেম্বর উপজেলায় সকল প্রার্থীদের নিয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সবাই নির্বাচনের বিধিনিষেধ সম্পর্কে সকল প্রার্থীকে অবগত করা হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন, নির্বাচনি প্রচারণায় হামলার কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি এবং সত্যতা যাচাই করতে মাঠ পর্যায়ে আমাদের ফোর্স প্রেরণ করেছি। কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে শুনলে সাথে সাথে ফোর্স পাঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হয়। আর যেসমস্ত জায়গায় গন্ডগোলের সঙ্কা রয়েছে ওখানে পুলিশের টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।