ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালে টালমাটাল ছিল দেশের পুঁজিবাজার। ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সূচকের পতন ও লেনদেন তলানীতে চলে গেলেও তৃতীয় সপ্তাহে (১৫-১৯ জানুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে।
একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সিএসইর সার্বিক সূচক ১২৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তিন হাজার ৮৫০ কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার ১১১ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১২১ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৯ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৭২৯ কোটি ১১ লাখ ৫৩ হাজার ১৯২ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৭ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২০৮ দশমিক ৬১ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৫৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৫৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৪০০টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ৬৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৭টির এবং ১১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের কোনো লেনদেন হয়নি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন বেড়েছে। আগের সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৭ কোটি ছয় লাখ টাকার।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৭ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৬ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০০টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯১টির দর বেড়েছে, ৫৪টির কমেছে এবং ১৫৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগামীতে বাজার আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ২০২২ সালের পুরো সময়টা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সমস্যার কারণে বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি সমস্যার কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু ২০২৩ সাল পুঁজিবাজারের জন্য সুদিন বয়ে আনবে।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহের লেনদেন দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। নতুন বছরে আমরা একটি স্থিতিশীল, আস্থাশীল, বিনিয়োগ বান্ধব পুঁজিবাজার দেখতে পাবো। ডলার সংকট, বিশ্ব বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বড় বড় সমস্যাগুলো কেটে গেলেই পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি আস্তে আস্তে ফিরে পাবেন।
অন্যদিকে বছরের শুরুতে সূচকের টানা পতন দেখা দিলে বাজার সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর। তাদের মতে, বৈশ্বিক যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল সেটি ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এটি অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
গত ৫ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা এবং চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে যে বিপদ দেখা দিয়েছে, তাকেও সম্পদে পরিণত করছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। মিথ্যা কথা বলছে, গুজব ছড়াচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। যারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পারে না, সেই গোষ্ঠীই পুঁজিবাজার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজারকে পেছনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, বাজার ভালো হবে।
একই অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এক বছর যাবত যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে (ইউক্রেন-রাশিয়া) একটা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যদিও আমাদের সরকার অনেক সুন্দরভাবে সেটা মোকাবিলা করে চলেছে। গত দুই-এক মাস থেকে বুঝতে শুরু করেছি বিদ্যুৎ, খনিজ তেল ও এলএনজি গ্যাস সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের যে প্রস্তুতি তাও আমরা ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আশা করছি একটি টেকসই, শক্তিশালী ও গতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে।