চট্টগ্রামের ব্যস্ততম সড়কের অন্যতম মুরাদপুর থেকে হাটহাজারী সড়কের রৌফাবাদ হয়ে অক্সিজেন মোড়। সড়কটিতে ওয়াসার কাটাকাটি, ধূলাবালি আর সিটি সার্ভিস বাসের বেপরোয়া চলাচলের কারণে যানজট, দূর্ভোগ, দূর্ঘটনাসহ নানা বিশৃঙ্খরা লেগেই আছে। এতে করে বিষিয়ে ওঠেছে নগরজীবন। ওয়াসা সূত্র জানায়, ওই এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের প্রত্যোকটি সড়ক কেটেছে ওয়াসা। ফলে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে মূল সড়ক থেকে অলিগলির এখন বেহাল অবস্থা।
সরেজমিনে গতকাল মুরাদপুর থেকে বিবিরহাট, হামজারবাগ, আতুরার ডিপো, রৌফাবাদসহ আরো কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার এক পাশের প্রায় অর্ধেক সড়কই কাটা। কোথাও-কোথাও কাজ শেষ হলে, কোনো রকম প্রাথমিক মেরামত (রিপেয়ার) করে দিলেও ঢালাই না করার কারণে সড়কগুলো উচু-নিচু, টিলায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে এই সড়ক দিয়ে যান যানচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি ধূলাবালির দূর্ভোগসহ যানজট লেগেই থাকে। এতে করে মানুষের ভোগান্তির কোনো অন্ত নেই। ওই সড়কের আশপাশের ব্যবসায়িরা জানান, ধূলাবালির নরক যন্ত্রনায় এখানে ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল পানি ছিঁটিয়েও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসা যাচ্ছে না। সোহেল নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, আতুরার ডিপো থেকে হামজার বাগ আধা কিলোমিটারের পথ। এই দূরত্বে আসতে যেখানে সময় লাগার কথা ১০-১৫ মিনিট সেখানে এখন সময় লাগছে ৪০-৪৫ মিনিট। এরপর গাড়ী থেকে নামলে ধূলাবালি আর নোংরা পানির জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার কাজের ধীর গতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বজ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ি কমিটির চেয়ারম্যান ও ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব মো. মোবারক আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সড়কের রাস্তা কাটাকাটি করছে। তাদের কাজ শেষ হলে আমরা প্রাথমিকভাবে সেই কাটা রাস্তাগুলো রিপেয়ার করে দিচ্ছি। পরবর্তীতে পুরোপুরী কাজ শেষ হলে, রাস্তা ঢালাই করা হবে। তখন যানজট ও ধূলাবালির দূর্ভোগ কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে জানতে মুঠোফোনে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে নগরীর নিউ মার্কেট থেকে ছেড়ে আসা ৩ নম্বর রোডের সিটি সার্ভিস বাসগুলো মুরাদপুর-অক্সিজেন হয়ে ফতেয়াবাদ পর্যন্ত চলাচল করে। এসব বাসের বিরুদ্ধে হয়রানিসহ রয়েছে এন্তার অভিযোগ।
অভিযোগে জানা যায়, মুরাদপুর মোড় থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সড়কে এমনিতেই ওয়াসার কাটাকাটির জন্য রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। তার উপর এই সড়কে চলাচলকারি সিটি বাসগুলো প্রতিযোগীতা মূলকভাবে বেপরোয়া চলাচল, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করানো এবং মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে রাখার কারণে ওই সড়কে দূর্ঘটনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলাসহ যানজটের। সরেজমিনে বিবিরহাট, হামজার বাগ ও অক্সিজেন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগীতায় লিপ্ত থাকে বাস চালকরা। এছাড়া মাঝ পথে যাত্রী সংকেত দিলে পেছনের বাসটি যেন ওভারটেক করে যেতে না পারে সে কারণে গাড়ী বাকা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। একইভাবে যাত্রীও নামায়। কিন্তু পেছনের বাসটি যে কোনো মূল্যে আগে যাবে এমন প্রতিযোগীতায় অহরহ দূর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সৃষ্টি হচ্ছে যানজটেরও। জানা গেছে, ট্রাফিক-পুলিশ শুধু মুরাদপুর মোড় আর অক্সিজেন মোড়ে রয়েছে। মাঝখানের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে ট্রাফিক-পুলিশ না থাকায় চালকরা ইচ্ছে মাফিক প্রতিযোগীতামূলক যাত্রী উঠানামা করানো এবং বেপরোয়া চলাচলের কারণে মানুষের জীবন অনেকটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পথ চলতে হয়। এ প্রসঙ্গে মুরাদপুর এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক টিআই মোহাম্মদ ই¯্রাফিল জানান, শুধু বাস নয়, যানজট নিরসণসহ সকল যানবাহনে শৃংঙ্খলা ফেরাতে এবং যত্রতত্র গাড়ী থামানো বন্ধে আমরা সর্বাত্নকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। একই কথা জানিয়েছেন, অক্সিজেন এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আমির ফারুক।