গাজীপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ওষুধ ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম (৪০) নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অন্তর ও রোমান নামে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাত ২টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের মসজিদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় আহত হন নিহতের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), শ্যালকের স্ত্রী সালমা আক্তার (২৭), শ্যালক হানিফ (২৯) ও চালক জাহিদুল ইসলাম শিমুল (৩৫)।
নিহত মো. হাসিবুল ইসলাম বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার ইলুহার গ্রামের মো. আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের মসজিদ মোড় এলাকায় বসবাস করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে শ্রীপুরের বাসায় আসেন হাসিবুল। এ সময় ৮/১০ জন লোক তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করলে একপর্যায়ে হাসিবুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয় তারা। পরে চালকসহ তাকে বেধড়ক মারপিট করে অভিযুক্তরা। মারপিটের একপর্যায়ে হাসিবুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় আল-হেরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক হাসিবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে আমি শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের মসজিদ মোড় এলাকায় বাবার বাড়িতে বসবাস করি। আমার স্বামীর মসজিদ মোড় এলাকায় ফার্মেসির দোকান রয়েছে। বুধবার আমরা ঢাকায় যাই। ঢাকার কাজ শেষে রওনা করে রাত ২টার দিকে প্রাইভেটকারে শ্রীপুরের বাসার সামনে আসি। নামা মাত্রই দেখতে পাই ৮/১০ জন কিশোর রাস্তায় হইচই করছে। আমরা গাড়ি থেকে যখন ব্যাগগুলো নামাচ্ছি, তখন তারা আমাদের সামনে এসে এত রাতে কোথা থেকে এসেছি তা জানতে চায়। এসময় তাদের চলে যেতে অনুরোধ করলে তারা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে থাকে। এসময় আমার স্বামীর সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে। গাড়ি চালক শিমুল এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
মাহমুদা আক্তার আরও বলেন, পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে হাসিবুলকে ইট দিয়ে আঘাত করে এবং মারধর করে চলে যায়। মারপিটের এক পর্যায়ে হাসিবুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আল-হেরা হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসক শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে হাসিবুলকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, রাত সোয়া ৩টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসিবুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতাল থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, নিহত হাসিবুল ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি বেড়ানো শেষে রাতে মাওনা বাসায় ফেরার পরপরই হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে। পলাতক রুবেলসহ বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে