কুটির শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। এ শিল্পে বাংলার আবহমান সংস্কৃতির প্রতিভাস ফুটে ওঠে, যার নির্মাতা পল্লী অঞ্চলের মানুষ। নিজেদের জীবিকা এবং নিজস্ব ব্যবহারের জন্য তারা এ সকল পণ্য উৎপাদন করে। বাংলার প্রকৃতি, মানুষ, পশুপাখি, লতাপাতা, গাছপালা, নদ-নদী ও আকাশ কুটির শিল্পের ডিজাইনে বা মোটিভে দেখা যায়। কুটির শিল্পকে অনেকে হস্তশিল্প, কারুশিল্প, সৌখিন শিল্পকর্ম, গ্রামীণ শিল্পও বলেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বা সংক্ষেপে বিসিক বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে।
বাইরে থেকে প্রথমবার মাজুর গ্রামে ঢুকে হকচকিত হয়ে পড়বেন যে কেউই। গ্রামের ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে কিশোরী-গৃহিণীরা সবাই ব্যস্ত বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন সাংসারিক সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র তৈরিতে। কি বাড়ির উঠান, কি পুকুরের ধার, বাড়ি লাগোয়া রাস্তা সবখানেই বাঁশ ও বেত নিয়ে কারিকুরি চলছে সবার। অবস্থা এমনই যে, বাঁশ-বেত পণ্যের গ্রাম বলে অনায়াসের পরিচয় গড়ে তোলা যায় মুরাদনগর উপজেলার মাজুর গ্রামকে।
কালের আবর্তে, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর কাঁচামালের দুঃষ্প্রাপ্যতা আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে কিছুটা থেমে গেছে এ শিল্পের গতি।কমে গেছে এ পেশায় থাকা মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু রীতিমতো এখনো সমান খ্যাতি-যশ রয়েছে এই মাজুর গ্রামের হাতে তৈরি জিনিসের। এ পেশাধারীদের আয়-উপার্জন কমে গেছে ঠিকই, তবে কমেনি তাদের জিনিষের জৌলুস ও চাহিদা।
এ গ্রামের পঞ্চাশের অধিক পরিবার যারা কুটির শিল্পের সাথে জড়িত। এই পেশাটি তাদের পৈত্রিক পেশা যা চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এদেরই বেশিরভাগ সবাই কমবেশি বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরির সঙ্গে জড়িত।
করোনা কালে কাঁচামালের সংকট ও ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে তাদের সাম্প্রতিক ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।গ্রামের মধ্যে যারা এ কাজ করেন তাদের বেশিরভাগ স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে থাকেন। আর পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পণ্য চলে যায়। অর্ডার অনুযায়ী কাজ করে দিলেই পয়সা হাতে আসে। তবে অনেকে রয়েছেন যারা নিজ উদ্যোগে এ কাজ করেন এবং হাটের দিনে স্থানীয়ভাবে এসব পণ্য বিক্রি করেন।এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মুরগির খাঁচা, ডালা, সাজি, কুলা, ঝুড়ি, বেতের তৈরি ঘড়ি প্রভৃতি।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ