ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি রোমাঞ্চকর ট্রেইলে। নাম তার মেলকুম ট্রেইল। নতুন এ পর্যটন কেন্দ্রটি তে আছে পরতে পরতে রোমাঞ্চ। গহীন অরণ্যে বড় শিলা পাথরের মাঝে ঝিরঝিরের শীতল ছড়ায় গা জুড়ানো পথ। গ্রামের মেঠো পথ ধরে বালি পাথরের ছড়ার ঝিরিপথ। মেলকুমের প্রবেশের
পর খাড়া উচু পাহাড়। দুই পাশে ১শ থেকে দুইশ ফুট খাড়া পাহাড়ের মাঝে নিচে বালি বিছানো সুরুপথ।
মেলকুম একটি ট্রেইল, মোটামুটি একদিনের ভ্রমনের জন্য যথেষ্ট এটা । চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড মিরসরাই রেঞ্জে যতো ঝিরি আছে সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন একটা ঝিরি, ঝিরিতে আপনি কোন পাথর পাবেন না, স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের কিরণ লেগে সুন্দরীর সাদা বালির নাকফুলের মতো ঝিলিক দিয়ে আপনাকে বিমোহিত করবে পুরোটা পথ, আলো ছায়ার খেলায় স্বচ্ছ পানি কখনো কখনো গাঢ় নীল মনে হবে, চোখের সামনে উড়ে বেড়াবে রং বেরঙের ঘাস ফড়িং, প্রজাপতির ঝাঁক, পানিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে এসে খুনসুটি খেলবে ঝিরি ছোট মাছ, তারপর দেখা মিলবে গন্তব্যের মেলখুম। কূপের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে পড়বে তারা পাহাড়ের বিস্তীর্ণ কঠিন সুরু পিচ্ছিল পথ। সতর্কতা তার সাথে এগিয়ে যেতে হবে হালকা-পাতলা মানুষ হলে যেতে সুবিধা হবে। বেশি স্বাস্থ্যবান ও মহিলা পর্যটকরা বেশি ভিতরে প্রবেশ না করাই ভালো। পিচ্ছিল পথে পড়ে হাত বা পায়ে বা মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মেলকুমের নাম করন:
মেলকুমের আশেপাশের স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন কোন এক সময়ে পাহাড়ে মেল পাতা থেতলিয়ে কুমের ভিতর দেয়া হতো, পাতার বিষে কুমের ও পাহাড়ি ছড়ায় মাছ মারা যেত। মেল মিশ্রিত ছড়ার পানি যতোটুকু যেত ততটুকুতেই মাছ মরে থাকতো। এভাবে মাছ শিকারের জন্য মেল পাতার ব্যবহার করতে করতে এই এলাকার নাম হয়ে উঠে মেলকুম।
ট্রেইলের পথ পরিচিতি:
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে সোনাপাহাড় এলাকায় বিশ্বরোডের সামনে নামবেন। তারপর হাঁটা পথে পূর্বদিকে যে রাস্তা ধরে মূল ট্রেক, হাঁটা শুরু করলে ৫ মিনিট পর রেললাইন পাওয়া যাবে, তারপর আর পাকা রাস্তা নেই, মাটির পাহাড় কাটা রাস্তা ৷ মেঠো পথ ধরে যখন হাটবেন ১৫ মিনিট হাটার পর পাবেন ছোট একটা কালভার্ট ৷ কালভার্ট থেকে সামনে গেলে পাবেন আম বাগান, হাতের ডান দিকে ছোট একটা ঝিরি এরা আছে সেই ছরা কোন পাথর নেই, চিকন একটা ঝিরি, ৬-৭ ফিটের মত পাশে সেই ঝিরি ধরে ধরে উজানে হাটা শুরু করলেই ৪৫-৫০ মিনিট হাটলেই মেলখুমের সামনে যেতে পারবেন ৷ পুরো ট্রেইল শেষ করে ঘুরে আসতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে। হাতের ডানে বামে অনেক পাহাড়ি ছোট রাস্তা আছে আপনি ঝিরি পথটাই ধরে হাটবেন হাটতে মেলখুমে পেয়ে যাবেন।
সতর্কতা:::::::::::::
যারা সাঁতার জানেন না,শ্বাসকষ্ট কিংবা ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে তারা এটি এড়িয়ে চলুন। কুমের পানি অনেক অনেক বেশী ঠান্ডা। মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে এই জায়গা।অবশ্যই কয়েকজন মিলেই যাবেন। বেশি ভারী ব্যাগ নিয়ে যাওয়া যাবে না। মেলখুমের রাস্তায় ভালো খাবার দোকান নেই তাই আপনার পছন্দমত খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
দূর দূরান্ত থেকে আসলে খাবার ও থাকার হোটেল হিসেবে বেছে নিতে পারেন বারইয়ার হাট পৌরসভার কিছু হোটেল রেস্তোরাঁ। মেলকুমের প্রবেশের আগে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের আধা কিলোমিটার উত্তরে পাবেন আরশিনগর ফিউচার পার্ক ও রেস্তোরাঁ, তিন কিলোমিটার দক্ষিণে পাবেন মহামায়া লেক ও হান্ডি রেস্তোরাঁ।