আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করে তুলতে চট্টগ্রামে মাঠ পর্যায়ে সড়ব থেকে শক্ত অবস্থান তৈরীতে ব্যস্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার চট্টগ্রাম সফরে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার ও দেশবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো প্রস্তুতি আলহামদুলিল্লাহ আমাদের আছে।
তার এমন বক্তব্যে চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা উৎফুল্লতা দেখা যায়।
জামায়াতে ইসলামী’র দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে জামায়াতের কর্মী-সর্মথক বেশী। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে জামায়াতের অবস্থানও এখন শক্ত।
জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দীর্ঘ দেড়যুগের বেশী সময় ধরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা ও হামলা সহ্য করেই দিন কাটাতে হতো। ফলে বছরের পর বছর নিজ নিজ এলাকায় বা ঘরে থাকতে পারতো না এমন নেতাকর্মীদের সংখ্যাও অনেক।
কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর সাংগঠনিকভাবে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে জামায়াত। নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিগত সরকার পতনের তিন মাসে নতুন করে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও শক্ত অবস্থান তৈরী করেছে তারা। বর্তমানে জামায়াত আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছে। মূলত ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রামে জামায়াতকেই বেশী চাঙ্গা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।
শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম ছিল একেবারেই গোপনে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ১৬টি বছর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে হতে পারেনি। ঘরোয়া গোপন বৈঠক ও মাঝে মাঝে আচমকা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম।
জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশী হয়রানি ছাড়াও সবকিছুতেই ছিল আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য। ফলে তারা বিগত সরকারের সময়ে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারেননি। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের অবস্থানও এখন শক্ত।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর সাংগঠনিকভাবে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির। নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এছাড়া চট্টগ্রামে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে, নগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের জামায়াতে ইসলামী ও অঙ্গ সংগঠন সমূহকে। বিভিন্নস্থানে চলছে সভা-সমাবেশ ও তাফসিরুল কোরআন মাহফিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নির্বাচিত আমীর হিসেবে ২০২৫-২০২৬ কার্যকালের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রিয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী। জামায়াতের কার্যালয়ে নগর জামায়াতের মজলিশে শূরার এক বিশেষ অধিবেশন ওই শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই চট্টগ্রামে জামায়াতকে বেশী সক্রিয় দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার চট্টগ্রাম সফরে এসে শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সামনে একের পর এক চ্যালেঞ্জ আসছে। একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যখন জাতি অভিযাত্রা শুরু করেছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে যখন দায়িত্ব হস্তান্তরের একটি নিউ ডাইমেনশনে যাত্রা শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহুর্তে এই তৎপরতা উদ্বেগজনক। জাতীয় নির্বাচনের দিকে যখন যাত্রা, তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শক্তভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে পুরো দেশের মানুষ আজ স্তম্ভিত। আমরা এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। এ হত্যাকান্ডে উস্কানি ও সৃষ্ট পরিস্থিতি যাদের জন্য তৈরি হয়েছে তাদের এ তৎপরতা, সাম্প্রদায়িক তৎপরতা, সহিংস এ তৎপরতা এবং দেশের অখন্ডতাবিরোধী এ তৎপরতা চলতে পারে কিনা- এটা বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের তিন প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের গভীর বিবেচনার সময় এসেছে। তা না হলে জাতির সামনে একটি কঠিন পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে সারা দেশবাসী। এ রকম একটি জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মকান্ড কি করে চলতে পারে? আমাদের দেশে আইন আছে। সে আইনের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আপনারা এরইমধ্যে দেখেছেন, দেশবিরোধী যে ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়েছে সেখানে পতিত স্বৈরাচারের নেতা-কর্মীরা জড়িত। বিভিন্ন বেশ ধরে কারা এ শান্তিপূর্ণ দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চায়? আবার ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে যেতে চায়? পুরো জাতির কাছে নানা প্রশ্ন এখন সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের যথেষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা আছে, আমি মনে করি আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থার আধুনিক প্রযুক্তির অনেক ইকুইপমেন্টস ও লজিস্টিক সাপোর্ট, উন্নত প্রশিক্ষণ আছে। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশকে শান্তি দেওয়ার জন্য তাদের সমস্ত অ্যাফোর্ড দিয়ে কাজ করা উচিত। সেটি করলে মানুষ আশাবাদী হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহাজান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক আমীর ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য জাফর সাদেক, জামায়াত নেতা অধ্যাপক ড. আবু হানিফা নোমান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ও শিবিরের নেতৃবৃন্দ।
সবমিলিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে দল গুছাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে জামায়াত এমন মন্তব্য ওঠে আসছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল থেকে।
সূত্র আরও জানায়, ইতিমধ্যে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর ভিত্তি মজবুত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর পর্যন্ত দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষানীতি, আইনের শাসনসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের শোষণ জুলুম-নির্যাতনের জবাব দিয়েছে ছাত্র-জনতা। অর্থ লুটপাট ও পাচারকারী দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করেনি।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে