বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হতে হলে তাকে "ছাত্র" হতে হবে—এমন ধারণা অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। বাস্তবতা বলছে, নেতৃত্বে বয়সের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মেধা, প্রজ্ঞা, এবং অভিজ্ঞতা। একজন নেতা যদি সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং দায়িত্ব পালনে যোগ্য হন, তবে তার বয়স বা ছাত্রত্বের সীমাবদ্ধতা সংগঠনের জন্য মুখ্য নয়।
এই লিখায় ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে বয়স, মেধা এবং অন্যান্য যোগ্যতার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়েছে এবং ব্যাখ্যা করা হচ্ছে কেন ছাত্রত্ব থাকার শর্তকে একমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে ধরা উচিত নয়।
বয়স: নেতৃত্বে সীমাবদ্ধতা নাকি শক্তি?
অনেকেই মনে করেন ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হতে হলে তাকে তরুণ এবং “ছাত্র” হতে হবে। তবে বাস্তবতা বলছে, নেতৃত্বে বয়সের তুলনায় অভিজ্ঞতা বেশি জরুরি।
১. বয়স বেশি হলেও নেতৃত্ব দক্ষতা প্রমাণিত হতে পারে
একজন তুলনামূলক বেশি বয়সী ব্যক্তি যদি সংগঠনের আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, তাহলে তার বয়স একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরং তার অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞা সংগঠনের নবীন সদস্যদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সহায়ক হয়।
২. তরুণ বয়সে অভিজ্ঞতার অভাব
তরুণ নেতাদের অনেক সময় বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব থাকে। তারা সংগঠনের আদর্শ রক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারে না।
ছাত্রত্ব: নেতৃত্বের একমাত্র যোগ্যতা নয়:
ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার জন্য "ছাত্রত্ব থাকা বাধ্যতামূলক"—এমন ধারণা সমস্যাযুক্ত। কারণ এটি নেতৃত্বের অন্যান্য গুণাবলিকে অবহেলা করে।
১. মেধা এবং প্রজ্ঞা বেশি গুরুত্বপূর্ণ
একজন নেতা যদি সংগঠনের আদর্শ ধরে রাখতে পারেন এবং কর্মীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হন, তবে তার ছাত্রত্ব থাকা বা না থাকা মুখ্য নয়। বরং তার কার্যকর নেতৃত্বই সংগঠনকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।
২. দীর্ঘমেয়াদে সংগঠনের লক্ষ্য পূরণ
অনেক সময় ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্য এমন নেতার প্রয়োজন হয়, যিনি সংগঠনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে পারেন। এই ধরণের নেতার ক্ষেত্রে বয়স বা ছাত্রত্ব বড় বিষয় নয়; বরং তার কৌশলগত দক্ষতা ও সংগঠন পরিচালনার ক্ষমতা মুখ্য।
ছাত্র রাজনীতিতে মেধার প্রভাব:
মেধাবী নেতারা রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন। তবে এই মেধা শুধু একাডেমিক অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি হতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সংকট মোকাবিলা করার ক্ষমতা, এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়।
১. মেধাবী নেতার ভূমিকা
একজন মেধাবী নেতা সংগঠনের লক্ষ্য এবং সদস্যদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যিনি আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তার ত্যাগ এবং নেতৃত্ব প্রমাণ করে যে প্রকৃত নেতৃত্ব বয়স বা ছাত্রত্বের সীমাবদ্ধতার বাইরে।
২. মেধার ভারসাম্য রক্ষা
মেধাবী নেতাদের মধ্যে প্রজ্ঞা এবং দায়িত্ববোধ থাকলে তারা শুধু সংগঠনের জন্যই নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বয়স এবং ছাত্রত্ব ছাড়াই নেতৃত্বের যোগ্যতা কী হওয়া উচিত?
১. প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা
একজন নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা থাকলে তার বয়স কিংবা ছাত্রত্ব কোনো বাধা নয়।
২. নৈতিক এবং আদর্শগত স্থিতি
নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতা, আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা, এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি।
৩. রাজনৈতিক কৌশল এবং সংগঠক দক্ষতা
ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজন, যারা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এবং সংগঠনকে সংঘবদ্ধ রাখতে পারেন।
নেতৃত্বের জন্য বয়স বা ছাত্রত্ব মুখ্য নয়:
ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বয়স বা ছাত্রত্ব থাকার শর্তকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে ধরা উচিত নয়। বরং নেতার মেধা, প্রজ্ঞা, এবং সংগঠক দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে যদি এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়, তবে সংগঠনগুলো তাদের প্রকৃত লক্ষ্য পূরণে সফল হবে। নেতৃত্বের জন্য বয়স নয়, বরং যোগ্যতা এবং কার্যকারিতা মুখ্য—এটাই হওয়া উচিত নেতৃত্ব নির্বাচনের মূল মাপকাঠি।
লেখক: এডভোকেট মোঃ সরোয়ার হোসাইন লাভলু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, জেলা ও দায়রা জজ আদালত , চট্টগ্রাম।