এক নারী শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। শনিবার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় খাবার দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে৷
অভিযুক্ত শাফায়াত ইকবাল মৃধা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের (২০১৯-২০ সেশন) শিক্ষার্থী। শাফায়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার বিভাগের ৩/৪ বন্ধুর সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখন অভিযুক্ত শাফায়াত তাকে ডেকে পরিচয় জিজ্ঞেস করে৷ পরিচয় দেয়ার পর নারী শিক্ষার্থীকে সরাসরি শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। এসময় ভুক্তভোগী নারী চিৎকার করে সাহায্য চাইলে 'স্যরি' বলে দৌড়ে পালিয়ে যায় ও পরিচয় লুকাতে আবাসিক হলে গিয়ে জামা পরিবর্তন করে ফেলে৷ পরে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাকে ধরে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসা হয়।
এসময় অভিযুক্ত শাফায়াতের পকেটে জন্মনিরোধক সামগ্রী পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনে প্রচুর পরিমাণ যৌনবিষয়ক কন্টেন্ট ও ছবি পাওয়া যায়। তার আচরণ বিশ্লেষণ করে তার বিভাগ ও আবাসিক হলের বন্ধুরা তাকে 'মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ' বলে উল্লেখ করলেও সে নিজেকে 'মানসিকভাবে সুস্থ' বলেন। তবে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক নিয়মিত গ্রহণ করার কথা স্বীকার করেন শাফায়াত।
এসময় ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শাফায়াত ইকবালের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তবে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে এবং 'যা করেছে ভালো করেছে এবং সে তা করতে পারে’ বলে উল্লেখ করে।
অভিযুক্ত শাফায়াত ইকবাল মৃধা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তাকে বটতলার একটি দোকানে দেখে পরিচিত হওয়ার জন্য তার সামনে যাই। পরে দোকানের বাইরে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবে কিনা জিজ্ঞেস করি। এরপর সে এতে রাগ হয়ে চিৎকার করে৷ পরে বন্ধুরা এসে আমাকে জেরা করে এবং তারা আমার উপর আক্রমণ করতে আসে। অভিযুক্ত মৃধা অনুতপ্ত কিনা জানতে চাইলে, বলেন 'আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুতপ্ত নই। আমি মনে করি এটা আমি বলতেই পারি।'
এ সময় ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি ৩/৪ জনসহ দোকানে বসে ছিলাম। সে আমার সাথে পরিচিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, 'আমি কি আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি? আমি পরিচয় দিলে সে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে 'আপনি কি আমার সাথে সে*ক্স করবেন?
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ক্যাম্পাসে বটতলার মত জায়গায় যদি একজন নারী শিক্ষার্থী এভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? এসময় শিক্ষার্থীরা তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ফোন দেয়া হলে জানা যায়, প্রক্টরের দায়িত্বে নিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মো. রুবেল এখনো দায়িত্ব বুঝে নেননি। এসময় প্রক্টরিয়াল বডির কেউ সেখানে উপস্থিত হননি। পরে সাভার থানায় ফোন করা হলে তারা নিরাপত্তার অযুহাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানায়৷
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করেন। বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, সে ভয়ংকরভাবে মাদকাসক্ত। তার নানা সমস্যা আছে। আমরা তার পরিবারের সাথে কথা বলেছি।
অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করছি। তবে যেহেতু এখন ভিসি বা প্রক্টর কেউই নেই। থানাও এখন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা তাকে পরিবারের সাথে কথা বলে হস্থান্তরের চেষ্টা করছি।