ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জীবিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে মৃত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করছেন বাবা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : রবিবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:২০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বাবার বিরুদ্ধে জীবিত সন্তানকে কাগজপত্রে মৃত দেখিয়ে এককালীন ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। তিনি উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তরফরাম ঘুনিপাড়া গ্রামের বদর উদ্দিন মিয়ার ছেলে। দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘদিন দেশে না থাকার সুযোগে একটি কুচক্রি মহল তার বাবাকে হাত করে ন্যাক্কারজনক এমন কাজ করেছেন বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভূক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের অভিযোগ, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি। দেশ স্বাধীন করেছি। বর্তমান সরকার জাতির বীর সন্তানদের সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানীত করেছেন। শুধু তাই নয় একটু স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছেন। সরকারের সেই উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করছেন একটি কুচক্রি মহল। আমি একজন (অবঃ) সেনা সদস্য গেজেট নং ৭০৮৪। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর মুক্তিযোদ্ধদের সমম্বিত তালিকায় ঢাকা বিভাগ টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় তার ক্রমিক নং-৫২১ ও পরিচিতি নম্বর ০১৯৩০০০৭৫৬৮। দীর্ঘদিন চাকরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাকে থাকতে হয়েছে। চাকরি শেষে আমি মুক্তিযোদ্ধার সনদসহ সকল কাগজপত্র আমার মায়ের কাছে রেখে ভারতে চলে যাই। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে এসে আমি চাকরীর ও মুক্তিযোদ্ধার সকল কাগজপত্র খোঁজ করি। তবে বাড়ির লোকজন সকল কাগজপত্র হারিয়ে গেছে বলে জানান। পরে আমি জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার বাবা বদর উদ্দিন প্রতারক চক্ররের সাথে হাত মিলিয়ে তার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। বয়সের কারণে ও স্টোকে প্যারালাইসিস অবস্থায় বর্তমানে বেকড়া ইউনিয়নের মুশুরিয়া গ্রামে বোনের বাড়িতে অবস্থান করছি। শষ্যাসায়ী হয়েও আমি এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি।

যারা আমাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। একই সাথে তার ভাতা নিজ নামে ইস্যু করার দাবি জানান তিনি। 

১৪২বছরের বয়োবৃদ্ধ বদর উদ্দিন শ্রবণশক্তিহীন হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন দীর্ঘ ত্রিশ/ চল্লিশ বছর নিরুদ্দেশ থাকাবস্থায় শ^শুর বদর উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা তুলতেন বলে স্বীকার করেছেন পুত্রবধূ শেফালী। তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফিরে আসার পর থেকে ভাতার টাকা তাকে পৌছে দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে শেফালী বলেন, আমার ভাসুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি এখন কোন কিছুই মনে রাখতে পারেন না। এ কারণে তিনি হয়তো এমন অভিযোগ করেছেন।

এ ব্যাপারে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।