ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়া এলাকায় বিসমিল্লাহ ড্রাই ওয়াশ এর দোকান করে দিনযাপন করছিলেন জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। কিন্তু করোনার লকডাউনের কারণে ড্রাই ওয়াশ এর ব্যবসায় ধস নামে। লকডাউনে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কি করবে কোন প্রকার সমাধান খুজে পায় না জাহিদুল। অনেক চিন্তা করে লকডাউনের সময় সিদ্ধান্ত নেয় কোয়েল পাখির খামার করার। যেমন চিন্তা তেমন কাজ।
গত বছর লকডাউনের সময় ঠাকুরগাঁও সদরের সালান্দর এলাকায় জমি লিস নিয়ে বিসমিল্লাহ কোয়েল পাখির খামার নাম দিয়ে কোয়েল পালন শুরু করেন জাহিদুল। খামার দেওয়ার ২ মাস পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই তাকে। ২ মাস পরে কোয়েল এর ডিম বিক্রয় করে লাভের মুখ দেখেন। তবে প্রানী সম্পদ বিভাগের কোন প্রকার সহযোগীতা পান নাই এমন অভিযোগ ও করেন তিনি। তার সাথে সরকারী সহযোগীতা পেলে খামার এর পরিধি বৃদ্ধি করে আরো অনেকের কর্মসংস্থানের আশাও ব্যাক্ত করেন জাহেদুল।
বর্তমানে জাহেদুল এর খামারে ২৫শত থেকে ৩হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন খামার থেকে ২২শত থেকে ২৩শত ডিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর তার খামারে এখন ৬ জন মানুষ নিয়মিত কাজ করে। এই খামার থেকে জাহেদুল সহ আরো ৬ জনের পরিবার ভালোভাবেই চলছে জানান খামারের অন্য কর্মচারিরা।
খামারি জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করেই বলেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন পরামর্শ এবং সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এত দূর এসেছেন। এখন শীতে প্রতিদিন ৫/১০ টি কোয়েল পাখি মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রানী সম্পদ থেকে কেও কোনদিন তার খামার দেখতেও আসে নাই। একবার শুধু রানী ক্ষেত রোগ এর জন্য কয়েকটি টিকা এনেছিল।
তিনি আরো বলেন, এখন আমার খামারে ৬ জন মানুষ কাজ করে। আমার খামারের ডিম বিক্রয় করে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকার মত লাভ থাকে। সেই টাকা কর্মচারিদের বেতন দিয়ে নিজেও সংসার নিয়ে ভালোই চলছি। তবে সরকারী কোন প্রকার সহযোগীতা বা লোন পেলে খামারের পরিধি আরো বাড়াবো। কোয়েল এর সংখ্যা আরো বাড়ালে ডিম উৎপাদন বেশি হবে। আরো মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই কোয়েল খামার এর মাধ্যমে। সেজন্য সরকারের কাছে সহযোগীতার আশা করেন জাহেদুল।
জাহেদুল জানান, একটি কোয়েল পাখি ৪৫ দিনে ডিম দেওয়া শুরু করে। ৬০ দিন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ডিম দেয়। এখন আমার খামারে প্রতিদিন ২২শত থেকে ২৩শত ডিম উৎপাদন হয়। খামার হতেই ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ব্যবসায়িরা। বর্তমান শীতে রাস্তার পাশের ভাপা পিঠা, ডিম সিদ্ধ করে বিক্রয় করা হয়। সেখানে ডিম এর চাহিদা ভালো।
খামারে কাজ করেন সুমন জানান, তিন বেলা সময় মত খাওয়া ও পানি দেওয়া হয় পাখিগুলোকে। ৭ দিন পর পর কোয়েল খামার পরিস্কার করা হয়। এই পাখির রোগ বালাই খুবই কম হয়। তবে এখন ঠান্ডায় অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। এছাড়া পাখির খাওয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেশি পড়তেছে লালন পালনে।
কোয়েল খামারের ম্যানেজার শরিফ জানান, সংসারে অভাব ছিল। কোয়েল পাখি পালন করে এখন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সংসারে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। কোয়েল এর খামারে সঠিক ভাবে খাওয়া দিতে পারলে ও পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিজেরও কোয়েল এর খামার করার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন ম্যানেজার।
ডিম ক্রয় করতে আসা বাজস্ট্যান্ড এর দোকানদার সরিফুল বলেন, কোয়েল এর খামার থেকে ৯ টাকা হালি দরে ডিম ক্রয় করে নিয়ে যাই। বাজারে খুচড়া ১২ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রয় করা হয়। এখন রাস্তার পাশে ভাপা পিঠা, ডিম সেদ্ধ এর দোকানে কোয়েল এর ডিম সিদ্ধ করে বিক্রয় করা হয় প্রতি পিচ ৫ টাকা দরে। এই ডিম অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ শাহরিয়ার মান্নান জানান, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এজন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ঔষধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোয়েল পাখি পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন শীতে কোয়েল পাখি মারা যেতে পারে। সেজন্য হিট দেওয়ার ব্যবস্থা করলে মৃত্যুর হার অনেকটা কমে যাবে।