জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরো এক বছর দুই মাস। কিন্তু এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আগামীতে কোন্ দল থেকে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোন্ এলাকায় কে এমপি নির্বাচিত হলে জনস্বার্থ প্রধান্য পাবে তা নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছে না। এই আলোচনায় উঠে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা। স্থান পেয়েছে নতুন নেতৃত্বের নাম।
সিলেট অঞ্চলও ওই আলোচনা থেকে পিছিয়ে নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এই আলোচনার মধ্য দিয়েই বের হয়ে আসছে জনবান্ধব প্রার্থীদের নাম।
সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে সিলেট-৫ আসন গঠিত। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি হাফিজ আহমদ মজুমদার। এই আসনে আওয়ামী লীগসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে আসছে।
স্থানীয়রা আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জনবান্ধব প্রার্থী কামনা করছেন। এই আলোচনায় স্থান পেয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মামুনুর রশীদ। যিনি এলাকায় কর্মীবান্ধব ও জনবান্ধব নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে মামুনুর রশীদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
মামুনুর রশীদের রাজনৈতিক জীবন বলতে গিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, তিনি ১৯৮১ সালে ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। এসময় তিনি সিলেটের এমসি কলেজে অধ্যায়ন করতেন। এই সময়ে তিনি জেলা ছাত্রদলের প্রথম সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে কালচারাল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন মামুনুর রশীদ। প্রতিটি মিছিল মিটিংয়ে তিনি থাকতেন সামনের সারিতে। সিলেট থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের রাজপথে তিনি ছিলেন আন্দোলনের অন্যতম এক কর্মী। এরশাদের পতনের পর এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মামুন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৯৩ সালে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ায় রাজনীতির অবস্থান পরিবর্তন করেন। যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেন নিজকে। ১৯৯৪ সালে কেন্দ্রীয যুবদলের সদস্য করা হয় তাঁকে। ১৯৯৬ সালে সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম আহŸায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। একই সময়ে জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন মামুন।
স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা জানান, ২০০৬ সালে এলাকার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন মামুনুর রশীদ। ২০০৮ সালে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক করা হয় তাঁকে। ওই বছরই সম্মেলনের মাধ্যমে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন মামুনুর রশীদ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এর পর থেকে মাঠের রাজনীতির সাথে নিজকে জড়িয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
মামুনুর রশীদের এলাকার সামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অর্থের অভাবে গরীব শিক্ষার্থীর যাতে লেখাপড়া বন্ধ না হয় সেদিকে তিনি নজর রাখেন। মামুনুর রশীদের অর্থায়নে এলাকার অনেক গরীব শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা জানান, গত প্রায় ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এই সময়ের মধ্যে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার অনেক নেতাকর্মী মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের পাশে অবস্থান নিয়ে সবসময় আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। নির্যাতিত নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে মনোবল চাঙ্গা রেখেছেন। নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন কঠোর ভাষায়।
স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা জানান, গত ১৪ বছরে শতাধিক মামলা হয়েছে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলা আইনিভাবে মোকাবেলা করতে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই করেছেন তিনি। মামলায় যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন তাদেরসহ পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। বিএনপির এক কর্মী কারাবন্দি ছিলেন চার মাস। ওই কর্মীটি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কর্মীটি জেলে যাওয়ার পর পুরো পরিবারকে চালিয়েছেন মামুন। এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে।
এ বছরের ভয়াবহ বন্যা সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয় কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের। বন্যার শুরুতে এলাকায় অবস্থান নিয়ে বানভাসী মানুষকে উদ্ধারে নিজকে আত্মনিয়োগ করেন। বন্যার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার পাশপাশি স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারকে পুর্নবাসন করেছেন অনেকটা নীরবে।
দৈনিক বায়ান্ন থেকে যোগাযোগ করা হয় মামুনুর রশীদের সাথে। জানতে চাওয়া হয়েছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কিনা। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এদেশের জনগণের স্বার্থে বিএনপি দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবি পূরণ হলে ও বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনি সিলেট-৫ আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।