ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রতিকুলতায় চলছে এবারের একুশের বইমেলা

কাজী হুমায়ুন কবির | প্রকাশের সময় : রবিবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৮:২৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

 বইমেলা না ফুসকা বিক্রেতাদের মেলা

 বইমেলায় সাধারণ ক্রেতাদের যাতায়াত ব্যয়বহুল

সিআরবি নৈসর্গিক অপার সৌন্দর্যের পরিবেশে বইমেলা শুরু হয়েছে। কোন জায়গায় এই বইমেলা হবে এ নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার পর শেষ পর্যন্ত সিআরবির শিরিষতলাতেই শুরু হয় এই বই মেলা। দর্শনার্থী, লেখকপাঠক ও ক্রেতাদের ভীড় জমে উঠেছে। মেলা শুরু হতেই উঠে আসে অনেক প্রতিকুলতার কথা। মেলা সফল হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, একজন প্রকাশক বলেন এবারের মেলাতে অনেক প্রতিকুলতা রয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় ঢুকতেই দেখেন সারি সারি ফুসকার দোকান। যেন ফুসকা বিক্রেতাদের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সুরে কয়েক লেখকরা বলেন, আমরা বইমেলা দেখতে এসে যেন প্রথম নজড়েই পড়ছে বই মেলার পরিবর্তে রাস্তার দুপাশে বসা ফুসকার মেলা। বাহারি রকমের ফুসকা। এ নিয়ে ফুসকা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বলে আমরা আগে থেকেই এখানে বসতাম তাই আমাদেরকে মেলায় যাওয়ার পথেই বসার জন্য বলা হয়েছে। দেখা যায়, সিআরবির দর্শনার্থীদের ফুসকা খাওয়ার ভীরে রাস্তা সংকীর্ন হয়ে পড়েছে। এই ভীড় ঠেলে মেলায় ডুকতে হয়। এদের পেরিয়ে মেলায় ঢুকে দেখা যায় বালূময় মেলা প্রাঙ্গন। দর্শনার্থী, পাঠক, লেখক ও ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাভাবিক হাটাচলায় ধুলা উড়ছে। এবার নেই কোন ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা। অনেক দর্শনার্থী ও ক্রেতা বলছে, গতবার চট্টগ্রামের এম এ আজীজ ষ্টেডিয়ামস্থ জিমনিশিয়ামের মাঠে কত সুন্দর ইটের সলিং ছিল, ধুলা ছিলনা। হাটাচলায় অনেক স্বাচ্ছ্যন্দ লেগেছে । কিন্তু এবার সেই ব্যবস্থা নেই। প্রকাশনা সংস্থার কয়েকজন বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারী মাসে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। যদি বৃষ্টি পড়ে তবেতো মেলার হবে বেহাল দশা। রাস্তা থেকে মেলার আয়োজন অনেকটা নিচে হওয়ায় মাটির অংশে কাদামাটি তৈরী হবে, সেই সাথে অনেকের মুল্যবান বই নষ্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এবার নতুন জায়গা শিরিষ তলা হিসাবে ষ্টলগুলোর ভাড়াও বেশী। প্রতিটি ডাবল ষ্টল থেকে নেয়া হচ্ছে ১২০০০(বার হাজার) টাকা , সিঙ্গেল স্টল থেকে নেয়া হচ্ছে ৭০০০ টাকা। যা নতুন জায়গা হিসাবে বেশী । জানিনা বই বেচা কেনা কেমন হবে। শিরিষ তলায় এমনিতেই দর্শনার্থীদের ভীড় থাকে। এবার ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীদের ভীড় বেশী মনে হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি মেলায় ডুকতে পারছেনা, ক্রেতা সাধারণ। অনেকটা পথ হেটে আসতে হয়। যার ফলে ক্রেতারা বিরক্ত হতে পারে। নেই ভালো গাড়ি পার্কিংয়ের ভালো ব্যবস্থা। যার কারনে যে যার মতো করে মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত কার পার্কিং করছে। বিকাল হলে দর্শনার্থী ও বইমেলার পাঠক-ক্রেতাদের আনা মোটর সাইকেল ও গাড়িগুলো ফুসকার দোকানের সামনেই পার্কিং করছে। এই যানজটের ফলে অনেক ক্রেতা বইমেলায় ঢুকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। জানা যায়, এবার মেলায় পর্যাপ্ত আলোক সজ্জা করা হয়নি। শিরিষতলায় মেলা হিসাবে চারিদিকের রাস্তাগুলো আলোকসজ্জা হলে অনেকে রাতের বেলায় মেলায় আসতে নিরাপদ মনে করতো। বিদ্যুত ব্যবহারে প্রকাশকদেরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। বিদ্যুত ব্যবহার নিয়ে কয়েক প্রকাশক অসোন্তষ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বলেন, সংস্কৃতি কর্মিদের জন্য যেই বাজেট তা কমিয়ে প্রকাশকদের জন্য আংশিক খরচ করলে প্রকাশকরা উপকৃত হতো এবং উৎসাহ পেত। 

চসিক সূত্র জানায়, এবারের বইমেলার বাজেট ৫০ লাখ টাকা। এবার মেলায় ৪৩ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল সিআরবির শিরীষ তলার মাঠ জুড়ে মোট ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি এবং সিঙ্গেল স্টল ৭৭টি। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার সৃজনশীল অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে। তাদের স্টলও বরাদ্দ ৪৩ হাজার বর্গফুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা।  এবারও জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে।

জানা যায়, এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সিআরবিতে অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এবারও মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’, ‘লেখক আড্ডা’, ‘নারী কর্নার’, ‘শিশু কর্নার’ এবং ওয়াইফাই জোন। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। 

জানা যায়, এবারের বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় থাকবে- রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমি উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। এছাড়াও মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুল- লোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হবে।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নব নির্বাচিত সভাপতি  মো. সাহাবুদ্দিন হাসান বাবু বলেন, অনেক জল্পনা কল্পনার পর এবারের বইমেলা শেষপর্যন্ত শিরিষতলায় হচ্ছে। এবারের মেলায় পাঠক ক্রেতা কেমন হবে জানিনা। প্রথমতো ধুলাময় মেলা, দ্বিতীয়ত বৃষ্টি হলে অনেক প্রকাশনী সংস্থার বই  নষ্ট হতে পারে। সেই সাথে এবারের বাজেটের খরচের অংশের কিছু অংশ লেখক প্রকাশকদের জন্য রাখা হয় তাহলে হয়তো প্রকাশকরা তেমন ক্ষতির স¤ু§ঙ্খিন হবেনা।

মেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, মেলাটা শিরিষতলায় হওয়াতে পাঠক ক্রেতাদের মেলায় আসতে যাতায়াতের একটা অসুবিধার শিকার হবেন। ব্যাক্তিগত গাড়ি যাদের আছে তারা ছাড়া সাধারণ জনগণ রেডিসন ব্ল, বা কদমতলীর মোড় অথবা টাইগারপাস মোড় থেকে আসাটা অনেকটা শখের বসে না হলে অনুৎসাহিত হবে। এবার প্রকাশকদের মুল্যায়ন অনেকটা কম হচ্ছে। মুলত এই মেলাটাতে প্রকাশকদেরই মুল্যায়ন বেশী করা উচিত। কারন মেলাটা তাদের মাধ্যমেই করা হয়েছে। বই মেলার সামনে ফুসকার দোকানগুলো নিয়ে আয়োজক সিটি কর্পোরেশনের আহবায়কের সাথে আলাপ করেছি, তাদের অশোভন নিয়ে কথা বলেছি, দেখি কি সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিকুলতাগুলো নিয়ে কথা বলছি। সেই সাথে শিশু কর্নারে রাখা রাইডার থেকে মুল্য নিলে সেটা বিনোদন না হয়ে বানিজ্যিক হয়ে যাবে। যা বই মেলার জন্য শোভনীয় নয়।

মেলার আহবায়ক সাবেক প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর ড. প্রফেসর নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু মুঠোফোনে বলেন, আসলে ফুসকা ব্যবসায়ীদের অংশটা মেলার অংশ নয়। এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। আর মেলায় আসা পাঠক ক্রেতাদের গাড়ির জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছি কিন্তু জনগণ সেই পার্কিংয়ে না রেখে যত্রতত্র রাখলে কি বলবো বলেন। এবার ইটের সলিং করা হয় নাই কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতবারও আমরা তেরপাল দিয়েছিলাম। এবারও তেরপাল দিয়েছি। আশা করি কোন সমস্যা হবেনা।