ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিয়েতে যে খুতবা পড়া হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১২:১৩:০০ অপরাহ্ন | স্বাস্থ্য

বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি। মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। স্বাভাবিক জীবনের অনিবার্য একটি প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সাধারণভাবে বিবাহ এমন একটি বন্ধন যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে।

বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ বিয়ের খুতবা। এই খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। তবে বসে দিলেও কোনো গুনাহ নেই। তাতে বিবাহের কোনো ক্ষতি হবে না। (জামেউল ফাতাওয়া,ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ) তবে অবশ্যই খুতবা আরবীতে দিতে হয়। নিচে বিয়ের আরবি খুতবা, উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে ধরা হলো-

 আরবি :

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه، ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا، من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له، واشهد ان سيدنا ومولانا محمد عبده و رسوله، الذي أُرسل الى الناس كافةً بشيرا ونذيرا، وداعيا الى الله بإذنه سراجا وقمرا منيرا، اما بعد.

وقال تعالى: يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ، واحِدَةٍ، وخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا ونِسَاءً واتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ والْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (سورة النساء:1)

وقال تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا (سورة الأحزاب: 70-71)

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي (صحيح الترغيب والترهيب للامام الالباني رحمه الله)

وقال عليه الصلاة والسلام: النِّكَاحُ من سُنَّتِي فمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَليسَ مِنِّي ، و ايضا قال: تَزَوَّجُوا الوَدُودَ الوَلودَ ، فإني مُكَاثِرٌ بكم الأنبياءَ يومَ القيامةِ  (أخرجه أحمد: 13594)

 বাংলা উচ্চারণ : 

ইন্নাল হামদা লিল্লাহি, নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু, ওয়া নাস্তাগফিরুহু, ওয়া নাঊযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা, ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনা, মাই ইয়াহদিহিল্লাহু, ফালা মুদ্বিল্লালাহ, ওয়া মাই উদলিল ফালা হাদিয়া লাহ।

ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ, আল্লাযি উরসিলা ইলান্না-সি কা-ফ্ফাতাম, বাশীরাও ওয়া নাযিরা।
ওয়া দা-ইয়ান ইলাল্লা-হী বিইযনিহী ওয়া সিরাজাও, ওয়া ক্বামারাম মুনীরা। আম্মা বা’দ!

ফাআঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজিম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত-তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।”

ওয়া-ক্বালা তায়ালা: “ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত-তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও, ওয়া-খালাকা মিনহা যাওজাহা, ওয়া-বাচচা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত-তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি, ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কা-না আলাইকুম রাকিবা।”

ওয়া-ক্বালা তায়ালা: “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত তাকুল্লাহা, ওয়া কূ-লূ কাওলান চাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আ-মালাকুম ওয়াগ ফির-লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা।”

ওয়া-ক্বালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: “ইযা তাযাওয়াযাল আবদু, ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দ্বীন‚ ফাল-ইয়াত্তাক্বিল্লাহা ফীন নিসফিল বাক্বী।” (শুয়াবুল ঈমান)

ওয়া-ক্বালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: “আন্নিকাহু মিন সুন্নাতী, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী।” ওয়া-ক্বালা আইজান: “তাজাওয়্যাজুল ওয়ালু-দাল ওয়াদু-দা, ফা-ইন্নি মুকাচিরুম বিকুমুল আম্বিয়া, ইয়াউমাল কিয়ামাহ।”

বাংলা অনুবাদ : 

নিশ্চয়ই প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনা, আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারেনা এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে সত্যিকারে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।

হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জোড়াকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং সতর্ক থাকো রক্ত আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তিক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা: ১)

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মক্ষেত্র ত্রুটি মুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে। (সূরা আহযাব: ৭০-৭১)

আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত।

 বিয়ের আরেকটি খুতবা

কেউ চাইলে ওপরের খুতবার (ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما) ‘ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা”র পর নিচের আয়াত ও হাদিসটি পড়তে পারেন:

اما بعد! فيا ايها المسلمون. قال الله تعالى. وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًا لِّتَسْكُنُوٓاْ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ (سُوْرَةُ الرُّومِ: ٢١)

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: النكاح من سنتي فمن لم يفعل بسنتي فليس مني، و تزوجوا فاني مكاثر بكم الامم،

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا معشر الشباب! من استطاع منكم البأءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن الفرج، ومن لم يستطيع فعليه بالصوم، (صحيح مسلم) ايها الشباب! بارك الله لك، وبارك عليك، وجمع بينكما في خير.

 বাংলা উচ্চারণ :

আম্মা বা’দ! ফা-ইয়া আইয়্যুহাল মুসলিমুন! কালাল্লাহু তায়ালা:  “ওয়ামিন আয়াতিহি আন-খালাকা লাকুম,মিন আনফুসিকুম, আযওয়াজান, লিতাসকুনূ ইলাইহা, ওয়াজা-আলা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতাও ওরাহমাহ, ইন্না ফি যালিকা লা আ-য়া-তিল লিকাওমিই ইয়াতাফাক্কারুন “ (সূরা রূম: ২১)

ওয়াকালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: “আন নিকাহু মিন সুন্নাতি, ফামান লাম ইয়াফআল বিসুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। ওয়াতাযাওয়াজু- ফাইন্নি- মুকাসিরুন বিকুমুল উমাম।”

ক্বলা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: “ইয়া মা- শারাশ শাবাব! মানিস তাত্বায়া মিনকুমুল বাআতা ফালি-য়াতাযাওয়াজ। ফাইন্নাহু আগায্যু লিল বাচারি, ওয়া আহসানু লিল ফারজি, ওমান লাম ইয়াস তাত্বি, ফা আলাইহি বিস সাওম।”

আইয়্যুহাশ শাবাব!বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া-জামাআ বাইনাকুমা ফি খাইর।

বাংলা অনুবাদ :

অতঃপর হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম যে, তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গী-সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক ভালোবাসা ও দোয়া। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা রূম: ২১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ে আমার সুন্নত বা রীতি। কাজেই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত পালন করবে না, সে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের বর্ধিত সংখ্যা দিয়ে অন্যান্য জাতির কাছে গৌরব প্রকাশ করব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ রাখে না সে যেন রোজা রাখে। (সহিহ মুসলিম)

হে যুবক! আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর বরকত দিক এবং চিরকল্যাণের সহিত তোমাদেরকে একত্রিত রাখুন। আমিন।


শিক্ষার্থী : ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ, আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই) বাংলাদেশ