শিক্ষকদের সম্মান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল- মানববন্ধন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি মডেল গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণশেষে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করাসহ জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করে সার্বিক বিষয় তুলে ধরলে জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার আহবান জানান।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন প্লে-কার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করতে করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মিলিত হন। পরে পুনরায় বিক্ষোভ মিছিসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করে সার্বিক বিষয় তুলে ধরলে জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার আহবান জানান।
প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, একটি বিশেষ মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য ছয়জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। তিনাদেরকে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এ ধরণের অস্থিরতার কারণে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের মাঝেও পাঠদানে ভীতি কাজ করছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ হচ্ছে বিঘ্নিত। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আন্দোলন ছিলো সংস্কারের। কিন্তু তা সেই পর্যায়ে থাকেনি। বরং প্রাইভেট টিউশন, টিফিনের টাকাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিয়মের মিথ্যাচার করে শিক্ষকদের সম্মানহানি করা হচ্ছে। সেই শিক্ষকদের সম্মান রক্ষার্থে আজ গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠেছে এর সত্যতা থাকলে প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে। তারা দ্রুত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনার দাবীর পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান। মানববন্ধনের পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান। সেখানে জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলমের সাথে সাক্ষাত করে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি মডেল গার্লস হাই স্কুলে যৌক্তির সংস্কারের নাম করে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে কয়েকজন শিক্ষককে হেনস্থা করা হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ অভিযোগ তুলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফের প্রশ্রয়ে গিয়াস উদ্দিন মৃধা, সাইফুল ইসলাম, নাছিমা আক্তার, বদরুন্নাহার, ফারজানা আক্তারসহ একাধিক শিক্ষক বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে তারা পরীক্ষার সময় নাম্বার কমিয়ে দেয়। তবে এসব মিথ্যা-বানোয়াট বলে দাবী করেন মানবনন্ধনকারী শিক্ষার্থীরা। এদিকে ভিন্নমুখী আন্দোলন বিদ্যালয়ের পড়ালেখার ধারাবাহিকতাকে নষ্ট করে দেয়ার প্রয়াশ হিসেবে দেখছেন অভিভাকরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, 'কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আবার কিছু পক্ষে আন্দোলন করছে। আর এই আন্দোলনকে ঘিরে বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থবির হয়ে পড়ছে। এসমস্ত বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকদের ভুলত্রুটি থাকলে কর্তৃপক্ষ দেখবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিচার করার কোনোই এখতিয়ার নেই। তদন্ত সাপেক্ষে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেয়া হবে, তেমনি যেসকল শিক্ষার্থী বিষয়টিকে ভিন্নদিকে ধাবিত করতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।'