ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কলকাতায় ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যা

ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৭ অগাস্ট ২০২৪ ০৪:৩৪:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

কলকাতায় এক ডাক্তারকে নৃশংসভাবে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকেই ভারতজুড়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো শুধু জরুরীসেবা ছাড়া সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষোভকে আরও চাঙ্গা করে তুলেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

 

৯ আগস্ট কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী এক ডাক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করে তার রক্তাক্ত দেহ ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদের দেশটির একাধিক শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

 

অনেক শহরে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নেতৃত্ব বিক্ষোভ করা হচ্ছে। তবে বিচারের দাবিতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

 

কলকাতায় শনিবার সকালের হাজার হাজার মানুষ মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলেন। পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরের স্লোগানসমেত বিক্ষোভ করেন তারা। এক প্রতিবাদকারীর হাতের একটি প্লেকার্ডে লেখা ছিল ‘যে হাত সেবাদান করে সে হাত থেকে রক্ত কেন ঝরে।’

 

রাজধানী দিল্লিতে চিকিৎসকদের একটি সমাবেশ ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়’, ‘ধর্ষককে ফাঁসি দাও’ স্লোগানে মুখরিত।

 

নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ হাসপাতালের সেমিনার হলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। একটি দীর্ঘ শিফটে দায়িত্ব পালনের সময় একটু বিশ্রামের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন ভুক্তভোগী।

 

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতীয় সম্প্রচারকারী এনডিটিভির খবরে বলা হয়, আদালতে একটি আবেদনে ভুক্তভোগীর বাবা-মা বলেছেন, তাদের মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তারা।

 

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তি তখন হাসপাতালে দায়িত্বপালন করছিলেন। তবে রাজ্য সরকারি কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি ভুলভাবে পরিচালনার অভিযোগও ওঠেছে।

 

‘ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম’

 

সোমবার প্রতিবাদসরূপ বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ বিশেষ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের একাধিক মেডিকেল ইউনিয়ন এই আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।

 

শনিবার থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ‘দেশব্যাপী পরিষেবা প্রত্যাহারের’র আহ্বান জানিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। এসময় বেসরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় সব ধরনের কার্যক্রম এবং চিকিৎসা স্থগিত রাখতে বলা হয়।

 

ধর্মঘটের আগে এক বিবৃতিতে আইএমএ প্রধান আর.ভি. অশোকন বলেন, ‘আমরা দেশের ডাক্তার ও কন্যাদের জন্য ন্যায়বিচারের এই সংগ্রামে দেশবাসীর সমর্থন চাই।’

 

এই হত্যাকাণ্ডকে ‘বর্বর’ বলে অভিহিত করেছে আইএমএ ।

 

একটি বিবৃতিতে আইএমএ বলেছে, ‘৩৬ ঘণ্টার ডিউটি ​​শিফট যেটিতে ভুক্তভোগীও দায়িত্বরত ছিলেন এবং বিশ্রামের জন্য নিরাপদ জায়গার অভাব…আবাসিক ডাক্তারদের কর্ম পরিবেশ ও জীবনযাত্রার অবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিবর্তন করতে হবে।’

 

স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সহিংসতা থেকে রক্ষা করা বিষয়ক ‘কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন’ বাস্তবায়নের দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

 

দেশব্যাপী একাধিক বিক্ষোভের একটিতে অংশ নিয়েছিলেন দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী আকাঙ্কা তিয়াগী। তিনি বলেন, ‘সঠিক অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। দীর্ঘ ২৪-৩৬ ঘণ্টা কাজের পর আমাদের বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত কোনও জায়গার ব্যবস্থা নেই।’