এবারের বর্ষা মৌসুম ইলিশ ছাড়া শেষ হলেও অসময়ে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে রুপালী ইলিশ, তাদের মুখেও ফুটে উঠেছে রুপাী হাসি। সংসার পরিচালনা, দেনা পরিশোধ করে সঞ্চয় করারও সুযোগ হয়েছে, আয় বেড়েছে শত ভাগ। ছোট বড় এসব ইলিশ বেপারীরা চালান করছেন ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকাম। এছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে। মনে হয় জেলেরা ৩৫ বছর আগের দিনে ফিরে গেছে। সাধারণত এ সময়ে বাজারে তেমন ইলিশ থাকেনা। তবে এবছর ছোট-বড় ইলিশের ছড়াছড়ি দেখে অবাক জেলে ও ক্রেতারা। বাজার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক, দামও ক্রেতাদের নাগালে।
বুধবার ( ১৯ জানুয়ারী) সরজমিন ঘুরে,জেলে ও মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস ইলিশের ভরা মৌসূম। যুগেরও বেশী সময় ধরে ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা মিলেনি। এবার মাঘ মাসের প্রথম থেকে অসময়ে ভোলার মেঘনায়-তেতুলীয়ায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এখানকার জেলে, আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা ইলিশকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া দামও নাগালের মধ্যে, তাই জেলার মাছঘাট ও হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু রূপালি ইলিশ। জংশন, তুলাতুলি, নাছির মাঝি, ভোলার খাল, মেদুয়ার মাঝির হাটেরঘাট, চকি ঘাট ও দৌলতখান মাছ ঘাটে দেখা যায়, তহবিলের মালিকেরা হাক-ডাক দিয়ে জেলেদে ধরা রুপালী ইলিশ বিক্রি করছে। পাইকার, আড়তদার ও খুচড়া বিক্রেতারা ডাকে অংশ নিয়ে মাছ ক্রয় করে নিচ্ছেন। একেকটি মাছ ২৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি (৪টা) ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রামের প্রতি হালি(৪টা) ইলিশ ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং প্রতিটি ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি(৪টা) ইলিশ ২৫০০ টাকা, ১ কেজির উপরে প্রতি হালি (৪টা) ৪৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ বর্ষার মৌসুমে ১ কেজির বেশী ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি এরশাদ।
মাছ ধরে ফিরে আসা জংশন ঘাটের জেলে শাহাবুদ্দিন জানান, ছোট নৌকায় ৬ জেলে নিয়ে মাছ ধরে একদিন পর ঘাটে আসি, মাছ বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। নুরু, কালু রশিদ, হাইসহ অনেকে জানান, এখন তারা প্রতি ট্রিপে ২৫-৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন, অল্প কয় দিনে বিগত দিনের দেনা পরিশোধ করে কিছু টাকা জমাও করেছেন, এ যেন আল্লাহর দান। বর্ষা মৌসূমে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫শ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারেনি। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লোকশান দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বর্তমানে মাছ বিক্রি করে সংসার পরিচালনা, দেনা পরিশোধ করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। আল্লায় এবার জেলেদের জন্য একটি দান দিয়েছে। সামনের বছরটা জেলেদের ভাল ভাবে কাটবে। ঘুইংগার হাট বাজরের ক্রেতা সেরিম, আকবর, জসিম, আঃরবসহ অনেকে জানান, বর্ষার চেয়ে ইলিশের দাম অনেক কম হওয়ায় মেঘনার টাটকা সুস্বাদু ছোট বড় মিলিয়ে ৪ হালি ইলিশ কিনেছি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসূম, অভয়াশ্রম, জাটকা রক্ষা অভিযান, অবৈধ জাল উচ্ছেদের অভিযান ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা অভিযান উপকূলীয় নদ-নদীতে সফল ভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। সকল নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেদের অবরোধ পালন ফলপ্রসূ হয়েছে, তাই জলেদের জালে ঝাকে ঝাকে রুপালী ইলিশ ধরা পরছে এবং জেলেরা অর্থ আয় করে সংসার পরিচালনা, বিগত দিনের ব্যাংক, এনজিওসহ বিভিন্নজনের দেনা পরিশোধ করে এবার সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়েছে।