ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকারের নতুন অস্ত্র ইন্টারনেট শাটডাউন: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৩ জুলাই ২০২৩ ০১:৩৬:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

বিএনপির আন্দোলন, সমাবেশ দমাতে সরকারের নতুন অস্ত্র ইন্টারনেট শাট ডাউন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সাইবার প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশন হয়ে উঠেছে জনগণের জন্য এক আতঙ্কের নাম। সাম্প্রতিককালে বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের সমাবেশস্থলের ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনায় সেটি আবারও প্রমাণ হলো।

 

রোববার (২৩ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

 

 

তিনি বলেন, এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গুম-খুন, জেল-জুলুম, নির্যাতন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলনকে দমন করার অপচেষ্টা করেছে। আর এখন তারা তাদের নতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে বিএনপির আন্দোলন দমাতে। বিএনপির আন্দোলন, সমাবেশ দমাতে সরকারের নতুন অস্ত্র ইন্টারনেট শাটডাউন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।

ক্ষমতাসীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে প্রয়োগ করছে নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট- শাট ডাউন’। নির্যাতনকারী পুলিশ কেড়ে নিচ্ছে মিছিলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগত ডিভাইস ‘মোবাইল ফোন’। সাইবার জগতে মানুষের যেটুকু স্বাভাবিক অধিকার অবশিষ্ট আছে সেই অধিকারকেও কেড়ে নেয়ার গভীর চক্রান্ত করছে আওয়ামী লীগ সরকার

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাজ হলো দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিচালনা এবং সেবার মান দেখভাল করা। কিন্তু জনগণের টাকায় প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকেই বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়নের আরেকটি আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জনগণকে; কেড়ে নেয়া হচ্ছে মত প্রকাশের অধিকারকে। ১২ জুলাই এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকার ইন্টারনেট সুবিধা বিচ্ছিন্ন/বিঘ্নিত করা হয়েছিল। অথচ ওইদিন সরকারি দলের সমাবেশস্থলের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল স্বাভাবিক। একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরও প্রকাশ হয়েছে।

 

বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাট ডাউনের এটিই প্রথম ঘটনা নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোপূর্বে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী এবং ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সব নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ আগ্রহী মহলকে করা হয়েছিল বিচ্ছিন্ন। ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন এক্সেস-নাও- এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেট শাট ডাউনের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। তার আগের চারটি দেশে (ভারতে ৮৪ বার, ইউক্রেনে ২২ বার, ইরানে ১৮ বার, এবং মিয়ানমার ৭ বার) বর্তমানে বিদ্রোহ অথবা যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। যা তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণ। পঞ্চম স্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি যুদ্ধ চলছে? কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে?

 

‘ইতোমধ্যেই ৬ বার ইন্টারনেট-শাট ডাউন করা হয়েছে। গেল বছর ১০ ডিসেম্বরে গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশের আগেও ২০টি আন্তর্জাতিক সংগঠন বাংলাদেশ সরকার বরাবর খোলা চিঠি দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা চালু রাখার আহবান জানিয়েছিল, যা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এসবের কোনো কিছুতেই সরকার কর্ণপাত করছে না’— যোগ করেন ফখরুল।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেবল ইন্টারনেট বন্ধ করাই নয়, আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, কিভাবে রাস্তায় সাধারণ মানুষকে বেআইনিভাবে আটকে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল তল্লাশির নামে গণহয়রানি করা হচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেল মতে, কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়াল-খুশি মতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা মানবাধিকার বিরোধী কাজ, যা বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।’

 

ডিজিটাল মাধ্যমে নিপীড়ন, জনগণের ওপর নজরদারি, ফোন কল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ব্ল্যাকমেইল করা, ভুল তথ্য, অপতথ্য, বিকৃত তথ্য ও কন্টেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালানোসহ নানান অপরাধ করে যাচ্ছ এই সরকার।

 

ইন্টারনেট শাট ডাউনের ঘটনা গুম- খুনের মতোই একটি অপরাধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনি অনলাইন থেকে তার অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও অপরাধ। ক্রমাগতভাবে এই অপরাধ করে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার। জনগণের টাকায় নজরদারি প্রযুক্তি কিনে জনগণের ওপরেই গোয়েন্দাগিরি করছে এই সরকার। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মতো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতোমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে। আবার বিরোধী রাজনীতিকদের আইডি হ্যাক করে তাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কুখ্যাত আইনের দ্বারা নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্রযুক্তির অপব্যবহার যত ধরনের অপরাধ করা সম্ভব, এই সরকার তা সবই করছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সাইবার জগতে গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য ইন্টারনেট-শাট ডাউনসহ নানান ডিজিটাল অপরাধের জন্য বিটিআরসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। চলমান ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাংলাদেশ ব্যাংকের আট হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী অথবা তাদের হুকুমদাতাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি; পেরেছে কেবল খাদিজাতুল কোবরা নামের এক ছাত্রীর জীবনকে দুর্বিষহ করতে কিংবা স্কুল পড়ুয়া কিশোরকে ফেসবুক পোস্টে লাইক দেয়ার অপরাধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বলি করে জামিন অযোগ্য অনির্দিষ্টকালীন কারাবাসী করতে।’