ঢাকা: যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে শনিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।
দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালন করছেন তাদের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জাতীয় ঈদগাহসহ সারা দেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে মাহে রমজান এবং পরবর্তী ১১ মাসের আমল সর্ম্পকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।
সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, জাতীয় সংসদের হুইপরা, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন।
এদিকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
এছাড়া এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহেও ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। এবারও একসঙ্গে ছয় লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান আয়োজকরা। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র অব্যাহত শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
ঈদ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।
এছাড়াও সকাল থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যান, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিল ঝিল, শিশু পার্কসহ সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো আবাল বৃদ্ধা বনিতার পদচারণায় মুখরিত ছিল। রোদের খরতাপ ঈদ আনন্দে বাধা হতে পারেনি।
এদিকে সারা দেশে মুসলিম ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকেদেরও ঈদ উদযাপন করতে দেখা গেছে।