ঢাকা, শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫শে মাঘ ১৪৩১

হরিণাকুন্ডুতে পেঁয়াজের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:১৩:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলাতে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়েছে সম্প্রতি। এখন জমিতে পুরোদমে হালি পেঁয়াজের চারা রোপনের ধুম পড়েছে। বীজ থেকে উৎপাদিত চারা রোপণ করা হচ্ছে মাঠজুড়ে। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোর থেকে সারাদিন পেঁয়াজের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ উপজেলাতে এর আগে এতো পেঁয়াজের আবাদ হতো না। তবে চলতি বছর পেয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় পেঁয়াজ চাষে ঝুকছেন এ উপজেলার কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজে চলতি বছর কৃষকরা আট-দশ গুণ বিক্রী করে লাভোবান হয়েছেন। যে কারণে ক্ষেত থেকে তুলে ওই পেঁয়াজ বিক্রির পরপরই আবার হালি পেঁয়াজ রোপনের কাজ শুরু করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে এখন কেবল পেঁয়াজ রোপণের চিত্র দেখা যাচ্ছে। আর তাইতো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ৩’শত ১৫হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তারা পেঁয়াজের কোন প্রণোদনা পাননি। এ চলতি বছর পেয়াজ বীজের দাম অনেক বেশী কৃষি অফিস থেকে এই বীজ সরবরাহ করা হলে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হতেন বলে তারা মনে করেণ। কৃষকরা বীজ, সারসহ পেঁয়াজ চাষে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস চান কৃষি অফিস থেকে।

চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। পেঁয়াজ জাতের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল লাল তীর কিং, রাণী ওয়ান, রাজশাহী কিংসহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ রোপণ করা হচ্ছে। পেঁয়াজের চারা রোপণের কারণে উপজেলায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বাইরে থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করে দ্রুত পেঁয়াজ রোপণের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক আওলাদ আলী জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার কৃষকরা আট-দশ গুণ লাভ পেয়েছে। যে কারণে ক্ষেত থেকে তুলে ওই পেঁয়াজ বিক্রির পরপরই আবার হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের কাজ করছেন।

প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপন করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৫’শত টাকা থেকে ৬’শত টাকার বিনিময়ে শ্রমিকরা কাজ করছেন। তবে একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় মজুরি একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের চারা রোপনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার শহীদ মোহাম্মদ তিতুমীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে আমাদের পেঁয়াজের বীজ বরাদ্দ কম থাকায় হাতেগোনা কিছু চাষিকে আমরা বিনামূল্যে বীজ দিয়েছি। আশা করি আগামীতে পেঁয়াজ বীজ বরাদ্দ বেশি করে তাদের কাছে প্রণোদনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও বলেন শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদের মাধ্যমে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। গত মৌসুমের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। এছাড়া এবার পেঁয়াজ বীজের দাম গত মৌসুমের তুলনায় একটু বেশি। তারপরও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। আমি চাই কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আর দেশ বাঁচলে সাধারণ জনগণের মনে শন্তি ফিরে আসবে। পেঁয়াজ চাষ বাড়লে এ উপজেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য উপজেলাতে রফতানি করা সম্ভব হবে। পেঁয়াজের দামও ভালো পাবে বলে আশা করি।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ