অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক সম্পদের যে সম্ভার ও সুযোগ আছে, সেটা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত জায়গা হওয়ার কথা, অথচ হয়েছে বিপরীত। এটা মানা যায় না। অনিয়ম বাংলাদেশের সব জায়গাতেই বেশি, তবে পার্বত্য এলাকায় যেন একটু বেশি। আমরা চাই কীভাবে এটা কমিয়ে আনা যায়। বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার প্রযুক্তি ও শিক্ষার ওপর। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার বাসভবন যমুনা থেকে ভার্চুয়ালি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দের জন্য আয়োজিত পার্বত্য জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর প্রাপ্য যে জায়গা, সেটা যেন হয়। লক্ষ্য থাকবে পার্বত্য এলাকা থাকবে সবার ওপরে, পিছিয়ে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। পার্বত্য অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা হবে বিশ্ব নাগরিক। শুধু নিজের এলাকা নয়, সারা বিশ্বকে আমরা পরিবর্তিত করব। মনকে ছোট রাখা যাবে না। সমতলের সঙ্গে ভেদাভেদ থাকলে, সেটা দূর করতে হবে। পরস্পরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী মাসে হবে তারুণ্যের উৎসব, এটা সবার উৎসব হোক। আমি যেন দেখি পার্বত্য জেলাগুলো এখানে উপরে থাকে এ উ ৎসবে। এটা বরাবরের মতই করব, এবার প্রথমবারের মত হবে। নিজেরাই উৎসাহের সঙ্গে এ উৎসব করবেন। অন্য তরুণদের চেয়ে পার্বত্য এলাকার তরুণরাও পিছিয়ে নেই, এটা প্রমাণ করার সুযোগ।
তিনি বলেন, কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন, আমি দূর করার চেষ্টা করব। আমরা দেশও বদলাতে চাই, আমরা আমাদের কাজ দিয়ে পৃথিবীও বদলাতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরো জানায়, নারী ফুটবল টিমে পার্বত্য জেলা থেকে আসা খেলোয়াড়দের সঙ্গে বৈঠকের স্মৃতিচারণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। আপনাদের এলাকার মেয়েরা কী দুর্দান্ত খেলল! কীভাবে বলবেন পিছিয়ে আছে? যারা আপনাদের এলাকা থেকে এসেছে তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। কী কঠিন পরিস্থিতি! কত কষ্ট করে পাহাড় ভেঙে বাড়ি পৌঁছাতে হয়! বাবা মা ঢাকায় আসলে কত কষ্ট করে তাদের আসতে হয়। এই প্রতিকূলতার মধ্যেই কিন্তু তারা বিশ্বজয় করে এসেছে।
পার্বত্য এলাকার তরুণরা যেন বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে এ আশাবাদ জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আপনাদের মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বজয় এনে দিয়েছে। তরুণদের শুধু বাংলাদেশের নাগরিক না, বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। দুর্গম এলাকা বলে পিছিয়ে থাকলে হবে না। সীমাবদ্ধতা থাকবে, কিন্তু মনের সীমারেখাকে বাড়িয়ে দিতে হবে। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে নিজ কৃতিত্ব দিয়ে পৌঁছে যেতে হবে।
বায়ান্ন/এসবি