বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মিলে ১১শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এডিবি ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন করছে। এই সহায়তা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পেয়ে যাওয়ার আশা করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই বাজেট সহায়তা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, সামাজিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংক ‘সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট’ কর্মসূচির আওতায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন করে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য বাংলাদেশকে সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়নে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমগুলো কার্যকর। এর মধ্যে আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন এবং শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার।
অন্যদিকে, এডিবি ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে ‘স্ট্রেনদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রাম, সাব-প্রোগ্রাম-১’ এর আওতায়। এই কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশের অর্থ বিভাগ। গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
কর্মসূচির মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। এর আওতায় রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ, সরকারি ব্যয়ের ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাজেট সহায়তার বাইরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অর্থ দিয়ে বিশেষ করে পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনা।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এই অর্থায়ন বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাজেট সহায়তার অর্থ সরকারি খাতে জরুরি চাহিদা পূরণ, রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সহায়তা দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই অর্থায়ন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এই বাজেট সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সংস্কার কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পানি সরবরাহ খাতের উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
বায়ান্ন/এএস/একে