আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য দিন। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিবসটিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবে। এদিন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর নামকরণ করা হয়।
একই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।
সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
মুজিবনগর সরকারের শপথের দিন ১২ জন আনসার সদস্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
পর দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন। তার এই ভাষণ আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচার হয়।
ওই ভাষণে দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তাজউদ্দীন। এছাড়া ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়।
তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে।
এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
পরে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং বিশ্বাস ঘাতকতামূলক যুদ্ধ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ায় দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, অস্থায়ী সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে।
মুজিবনগর দিবসে জাতীয় কর্মসূচি
মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য রবিবার সকাল ৯টায় মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
আম্রকাননে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গার্ড অব অনার দেবে। পাশাপাশি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজও অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ১০টায় মুজিবনগরের গীতিনাট্য ‘জল, মাটি ও মানুষ’ প্রদর্শিত হবে। পৌনে ১১টায় মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
এছাড়া মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সোয়া ১০টায় গার্ড অব অনার প্রদান এবং সকাল সাড়ে ১০টায় ‘শেখ হাসিনা মঞ্চে’ মুজিবনগর দিবসের জনসভা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।