বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যার্ত মানুষের সহায়তাসহ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের সকল কাজেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ-ছাত্রলীগের কর্মীরা আক্রমণ করে। এদিন শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই পালাতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর পুনরায় ১৭ তারিখ তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির ও উপাচার্য অধ্যাপক মো নুরুল আলমের নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ভ্যাকেন্টের দুইদিন পার না হতেই ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে পুলিশ বাধ্য হয় ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যেতে। ছাত্রলীগ ও পুলিশমুক্ত হয় এই জাবি ক্যাম্পাস।
এছাড়াও দীর্ঘ ৩১ বছর পর গত ২১ আগস্ট ডুম্বুর বাধ খুলে দেয় ভারত। এতে প্লাবিত হয় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর সহ প্রায় ১০টির অধিক জেলা। রাত পোহাবার আগেই সর্বপ্রথম জাবি শিক্ষার্থীদের দুইটি উদ্ধারকারী দল পৌঁছে যায় বন্যার্তদের সহায়তায়। বন্যার্তদের সহায়তায় জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সকলের উদ্যোগে প্রায় ১ কোটি টাকার ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয় বন্যার্ত বিভিন্ন জেলায়। ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে পার্বত্য জেলাগুলোতে। অর্থ উত্তোলনে শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছিল পুতুল নাচ, ছবি আকা এবং গানের সন্ধ্যার। মানুষের সহায়তায় দূর- দূরান্তে ছুটি বেড়াচ্ছে জাবির শিক্ষার্থীরা।
শুধু জাবির শিক্ষার্থীরাই না, জাবির শিক্ষকরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছিলেন তখন প্রায় সকল শিক্ষকরা ছিলেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে। ১৫ জুলাই যখন শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও পুলিশবাহিনী আক্রমণ করে তখন শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন অনেক শিক্ষক। এরপরে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের নিজের বাসাতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। শুধু আন্দোলনের সময়ই না, বন্যার্তদের সহায়তায়ও নিজেদের একদিনের বেতনকে তারা দান করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও তারা বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের তারা ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণে সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই জাবির শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। যখন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ও পুলিশবাহিনী আক্রমণ করছিল তখন জাবির শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। যে মিছিলে আক্রমণ করে ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী। এর পর শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয় ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় সকল ক্যাম্পাস থেকেই শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করে৷ একইভাবে জাবিই সর্বপ্রথম আশেপাশেই সকল স্কুল কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়কে একাত্ম করে আন্দোলন পরিচালনা করে। এছাড়াও ব্ল্যাক আউট- কারফিউ চলাকালীন সময়ে ঢাবি আন্দোলনে সক্রিয় হতে না পারলেও জাবি সবসময়ই সত্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতনের পরই কৃত্রিম বন্যায় বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এতে ডুবে যায় দেশের ১০ টি জেলা। এই সকল এলাকায় বন্যার্তদের সহায়তায় জাবি শিক্ষার্থীরা সবার আগে এগিয়ে এসেছিল। গণত্রাণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় কয়েকদফায় প্রায় কোটি টাকার উপরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এরপরে পুনর্বাসন কাজেও অংশ নিবে জাবির শিক্ষার্থীরা। এভাবে সামনের দিনেও সকল ক্ষেত্রে এমনকি দেশ গঠনেও জাবির শিক্ষার্থীরা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে।’
এ বিষয়ে ৪৮ ব্যাচের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, একটা দেশকে মাপার অন্যতম একটা মাপকাঠি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ থেকেই অর্জিত বিদ্যা দেশ ও দশের কাজে লাগে। দেশকে বারবার পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলন ,সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সংস্কৃতির রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের যে কোন প্রয়োজনে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহণ করেছে, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তার পরের বন্যার সংকটকালীন সময়ে আমাদের ভাইরা দিনরাত পরিশ্রম করেছে। যুগে যুগে আমরা আমাদের এই প্রতিবাদী পরিচয় অক্ষুণ্ন রাখবো।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, আমি গর্বিত জাবির একজন শিক্ষক হিসেবে। আমার শিক্ষার্থীরাই প্রথম তাদের তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছে। সারাদেশে যখন কারফিউ এর মধ্যেও আমার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছে। তারা পুলিশের অস্ত্রকে ভয় না পেয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ছিল। তাদের এই আন্দোলনের স্পৃহা পরে সারা বাংলায় প্রতিফলিত হয়েছে। একইভাবে তারা বন্যার্তদের সহায়তায় কাজ করে গেছে। তারা তাদের সাধ্যমতো এগিয়ে গেছে। নিজের জীবনকে বাজি রেখে বন্যার্তদের তারা রক্ষা করেছে, ত্রাণ দিয়েছে। জাবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সবসময়ই অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছে। সামনেও করে যাবে। অধিকার আদায়ে জাবি সবসময়ই সচেষ্ট।