অন্তবর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগকে বলি একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল। এখন প্রশ্ন আসে, ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কীভাবে রাজনীতি করতে পারে? যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, তাহলে গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না।’
বুধবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান গত ১৬ বছরে আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নতুন বাংলাদেশে যেন সেই রকম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এক নয়। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারকে বসানো হয়েছে, যাতে আরেকজন শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে। বাংলাদেশের কিছু মৌলিক বিষয়ের সংস্কার দরকার। আর এ জন্য দরকার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।
পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন বলা হচ্ছে সাংবাদিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাদের আসলে পেশাগত পরিচয় সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি, যে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অংশীদার ছিল, সুবিধাভোগী ছিল, তার একটাই পরিচয় সে ফ্যাসিস্ট এবং গণহত্যাকারী। সে শিক্ষক কি না, সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় না।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের ৯ দফার একটি ছিল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই মাসে আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ ছাত্রদের ওপর যখন হামলা চালিয়েছিল, তখন আমরা দেখেছি, তারা হিংস্র পশুর মতো আচরণ করেছে। মানবিকতা হারিয়ে ফেললেই মানুষ হিংস্র পশুর মতো আচরণ করে। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ দলীয় লেজুড়বৃত্তিতার কারণেই পশুত্বের পর্যায়ে গিয়ে নিজেদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের যে সংবিধান রয়েছে, এই সংবিধান দিয়ে আমাদের আর চলবে না। বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি সংবিধান এখন ফরজে আইন হয়ে গিয়েছে। আর্টিকেল সেভেনে (অনুচ্ছেদ ৭) যেভাবে লেখা আছে যে বাংলাদেশের সংবিধানের পার্ট ওয়ান (প্রথম ভাগ), পার্ট টু (দ্বিতীয় ভাগ) এবং পার্ট থ্রিকে (তৃতীয় ভাগ) আর কোনোভাবেই পরবর্তী কোনো সংসদ এসে আর পরিবর্তন করতে পারবে না—এ কথাটুকুই যথেষ্ট বাংলাদেশের নতুন একটি সংবিধান প্রস্তাবনা করার জন্য। আমরা কিন্তু সেই লক্ষ্যেই হাঁটছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিকুস সালেহীনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।