ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কঠোর অবস্থানে ইসি?

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৩ মে ২০২২ ১২:৩৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

সুষ্ঠু ভোট ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুষ্ঠেয় প্রথম ভোটে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে ইসি।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, শক্ত-নরম অবস্থানের বিষয় এখানে নেই। আইনের বিধান অনুযায়ীই ইসি কাজ করছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৪ এপ্রিল প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে এ কমিশন। সেই সঙ্গে দেশের ১৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, সাতটি পৌরসভা ও তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিলও দেওয়া হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এসব ভোট সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ইসি। নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার রোধ ও সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর থাকার জন্য মাঠ প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে ইতোমধ্যে।

গত ১৬ মে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে একদফা সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে আচরণবিধিমালা অনুসরণ করার জন্য কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে চিঠিও দিয়েছে কমিশন।

চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করে ইলেকশন কমিশন। পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে রবিবার ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা, দাখিলকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পূর্ব এনায়েতনগরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহাবুব আলমের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে ইসি।

এদিকে আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর দায়ে মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমানকে সতর্ক করা হয়েছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্র ও ভোটকক্ষে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য ভাড়া করে ৮৫০টি সিসিটিভি স্থাপনের টেন্ডারও আহ্বান করেছে ইসি।

এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন কাজে অর্থ ছাড় স্থগিত রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাতেই ইসি থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সিটি এলাকায় নতুন কোনও প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন বা অর্থ ছাড় দেওয়া নিষিদ্ধের পাশাপাশি কাবিখা ও ভিজিডি’র মতো কর্মসূচিগুলোও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত এক যুগে বিভিন্ন মহলে যে অস্বস্তি রয়েছে, তা থেকে বের হতে চায় বর্তমান কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন সুষ্ঠু করে রাজনৈতিক দলসহ ভোটারদের মধ্যে নিজেদের আস্থা অর্জন করতে চায় ইসি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, গোপনীয়তার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কমিশন। তারা যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে তা সকলকে অবহিত করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চায়। যে কারণে প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়ার পর ইসি গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে শুরু করেছে।

এর অংশ হিসেবে গত কয়েকদিনের প্রতিটি সিদ্ধান্তই তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। সস্প্রতি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ কয়েক ধরনের অংশীজনের সঙ্গে যে সংলাপ করেছে তার সারসংক্ষেপ এবং এ বিষয়ে ইসির অবস্থানও রবিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক— সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রাথমিকভাবে যে পদক্ষেপগুলো আমরা দেখছি নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। তবে এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। আরও কঠোর হতে হবে। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন তো বড় কিছু নয়। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তাদের শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। আরপিওর ক্ষমতা শক্তভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে তারা যেসব কথা বলছে তাতে তাদের একটি অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এ থেকে সরে আসতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ তফসিল ঘোষিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন অনুসারে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আচরণবিধিতে কোনও শিথিলতা বরদাশত করা হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, শক্ত বা নরম অবস্থানের বিষয় নয়, আইনে আমাদের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটার প্রয়োগ করছি। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।