বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সধারণ সভা। একই সঙ্গে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় 'খাসি সেং কুটস্নেম' অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার দিনব্যাপী নিজেদের ঐতিহ্যময় কৃষ্টি আর সংস্কৃতি চর্চায় হাসি-আনন্দে পুরনো দিনগুলিকে বিদায় দিয়ে নতুনকে আহ্বান করে নিলো আদিবাসী এই জনগোষ্ঠী।
পাহাড়-টিলার বুকে পান গাছের পরতে পরতে যে জনগোষ্ঠীর জীবনগাঁথা ছড়িয়ে আছে- তারা হলো ‘খাসি’ সম্প্রদায়। এমনি একটি উৎসব “খাসি সেং কুটস্নেম” খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিজস্ব বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব।
বৃহত্তর সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জির মান্রীদের সংগঠন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সঙ্গে মতবিনিময়, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সভা এবং নানা খেলাধুলা ও খাসি'দের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতির নৃত্যের মাধ্যমে মাগুরছড়া খেলার মাঠে গতকাল বুধবার দিনব্যাপী এ উৎসব হয়। দুপুর ১২টায় উৎসব শুরু হলেও মূল পর্বের অনুষ্ঠান হয় বেলা ২টায়।
ফুটবল মাঠের এক প্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর সুপারি গাছের পাতার ছাউনি দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি আনন্দ মোহন সিনহা। প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দীন প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির প্রধান জিডিসন প্রধান সুছিয়াং।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যার আসিদ আলী। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি সনাতন হামোম,সমরজিৎ সিংহ,সুনিল মৃধা,নিরঞ্জন দেব,পরিমল বাড়াইক,ভিম্পল সিনহা, মো. জাকারিয়া আহমদ প্রমূখ।
খাসিয়ারা তাঁদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জির হিসাবে বছরের শেষ দিন ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব উদ্যাপন করেন। এবছর ১৫৮ তম বর্ষকে বিদায় জানালো আদিবাসী খাসি সম্প্রদায়। উৎসব উপলক্ষে বর্ণিল সাজে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা সেজে থাকে। এ উৎসবের মাধ্যমে তাঁদের বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধুলা তুলে ধরা হয়। খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচগান, তেলযুক্ত একটি বাঁশে উঠে ওপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহণ, দুটি পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার, তির–ধনুক খেলা, গুলতি চালানো, নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে অতিথিদের আনন্দ দেওয়া হয়। বড় আকারে মেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়।
প্রতিবছরের মতো এবারও মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের উদ্যোগে খাসি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়।
বৃহত্তর সিলেটে ৮০টির মতো খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। প্রতিটি খাসিয়াপুঞ্জির খাসিয়ারা কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির খাসি সেং কুটস্নেম, অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন।