ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতন : পিবিআই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৩:৪৮:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

 

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করা হয়েছে। 

 

বুধবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ আবেদন করেন কার্টুনিস্ট কিশোর। আবেদনের ওপর আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

এর আগে, গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কিশোরের নির্যাতনের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি বলে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।  

 

প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।

 

গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। 

 

মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার। তারা কিশোরের শরীরে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি। 

 

 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত ১০ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন।

 

এরপর গত ১৪ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে নির্দেশ দেন। এছাড়াও মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

 

কিশোর তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত একজন আমাকে বলে, দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আসেন। সঙ্গে একটি ভালো শার্ট পরেন। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে পরিচয় দেয়নি। তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ ও যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।

 

আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে তারা অনেক জোরে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল। হয়তো এজন্য আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন দেখানো হচ্ছিল। সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে সেগুলো আঁকার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি আমি। এভাবে ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।