ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কালের সাক্ষি রাণীশংকৈলের টংকনাথের রাজবাড়ি ধ্বংসের মুখে

রবিউল এহ্সান রিপন: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৪ এপ্রিল ২০২২ ০২:২৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় পয়ত্রিশ কিলোমিটার পথ পারি দিলেই কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত রাজা টংনাথের এই জমিদার বাড়িটি চোখে পরবে। তবে অপরুপ সৌন্দর্যের এই বাড়িটি এখন ভুতুরে বাড়ি হিসেবে রুপ নিয়েছে।    

শতবর্ষী ঠাকুরগাঁওয়ের জমিদার বাড়ীটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে। জেলার ঐতিহ্য বহন করা বাড়িটি যুগের পর যুগ পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকায় এখন মাদকের অভয় আরণ্যে পরিনত হয়েছে। আর প্রশাসন বরাবরের মতো বলছেন, সংশ্লিস্ট দপ্তরে পত্র পাঠানোর পর আশ্বস্ত করেছেন দ্রæত সংস্কারের।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অনেক অংশই নষ্ট হয়েছে দেখভাল ও সংস্কারের অভাবে। মাঝে মাঝেই খসে পরছে ইট ও পলেস্তেরা। দ্বিতল ভবনের অধিকাংশ প্রান্ত থেকে আগাছা জন্মমিয়ে রুপ নিয়েছে গাছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায় জরাজীর্ণ ও অবহেলিত অবস্থায় দন্ডায়মান রাজবাড়িটি। দেখে মনে হয় বনজঙ্গল, চামচিকার অবাদ বিচরণ ও অনেক স্থান ধ্বসে পড়ার মর্মান্তিক দৃশ্য। সংস্কার ও সংরক্ষণের নেই কোন সরকারি উদ্যোগ বলে অভিযোগ সুশীল সমাজের। ১৯১৫ সালে রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

টংকনাথের পিতার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন মৈথিলি ব্রাক্ষণ এবং কাতিহারের ঘোষ বাগোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। নিঃসন্তান বৃদ্ধগোয়ালা জমিদার কাশিবাসে যাওয়ার সময় সমস্থ জমিদারি সেবায়েতের তত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান। তিনি কাশি থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারী পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর দু-এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে বলে অনেক প্রবীণেরা ধারনা করেন।

রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করেলও শেষ করতে পারেনি। এটির কাজ সমাপ্ত করেন রাজা টংকনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টংকনাথ রাজা উপাধী পান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজ বাড়িটি নির্মিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ধ্বংসস্থুপে পরিণত হয় রাজবাড়িটি। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে। অযতেœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে রাজবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংস্থুপ প্রায়।  

চোখ জুড়ানোর জমিদার বাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদন্ডে ঝ.ঘ.ঊ.ড চিহ্ন অঙ্কিত থাকলেও তা এখন আর চোখে পরে না। দিন যত যাচ্ছে অযতেœ ও সংরক্ষনের অভাবে রাজবাড়ির ঐহিত্য মুছে যাচ্ছে।

দুর-দুরান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসুরা উত্তরের এ জেলার রাজবাড়িটি উপভোগ করতে এসে মুগ্ধতার বদলে ফিরছেন আক্ষেপে। স্থানীয়রা মনে করেন এখনো রাজবাড়িটি সংস্কার করা হলে বিনোদন স্পটের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে প্রসার ঘটবে।  

রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা ওমর ফারুক বলেন, এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম এটির অবস্থা ভঙ্গুর। এটি মাদকের আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপনাগুলো এভাবে ধংস্ব হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেও নেই। এগুলো সংস্কারের জন্য আবেদন জনাচ্ছি।

রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় তদারকির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবলে পড়ে রাজবাড়ির মূল্যবান সম্পদ চুরি ও লুট হয়ে যায়। দখলকারীরা অনেকে বাড়ির ইট সহ নানান স্থাপনা নিয়ে চলে যায়। এই বিষয়ে অনেকবার বিভিন্ন প্রিন্ট ও মিডিয়াতে নিউজ প্রচার হওয়ার পরেও কোন প্রকার সংরক্ষনের উদ্যেগ নেওয়া হয় নাই। প্রাচীন এই নিদর্শন আজ বিলুপ্তির পথে।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, ইচ্ছে থাকলেও পতœতত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া রাজবাড়ির কোন কাজ করা সম্ভব নয়। তবে সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানোর পরে পতœততœ কর্তৃপক্ষ দ্রæত সংস্কার করার আশ্বস্ত করেছেন।