বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট প্যালেস। সেখানে অবস্থান নিয়েছেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
এছাড়া রাজধানী কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও দেওয়া হয়েছে আগুন। এরপর থেকে দুদিন হয়ে গেলো তাদের আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তাহলে কোথায় রয়েছেন শ্রীলঙ্কার এই দুই নেতা?
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শনিবার (৯ জুলাই) সকালে প্রেসিডেন্ট ভবন ও তার কার্যালয়ে জনতার মিছিল যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে কারফিউ ঘোষণা করে পুলিশ। অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুশল পেরেরা আল জাজিরাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় প্যালেসে ভূগর্ভস্থ একটি বাঙ্কার নির্মাণ করেছিলেন প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। এই বাঙ্কার দিয়েই প্রেসিডেন্টকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার উপায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখান থেকে কলম্বো বন্দর দিয়ে ৭৩ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতিকে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বাঙ্কারের খোঁজ পেয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এটি আলমারির পেছনে লুকানো ছিল। যা সরাসরি চলে গেছে মাটির নিচে। বাঙ্কারের সঙ্গে একটি লিফট আছে, যার মাধ্যমে নিচে যাওয়া যায়।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ঘনিষ্ঠ সহযোগী পেরেরা বলেন, নৌবাহিনী ক্যাম্পের গানবোটগুলো স্ট্যান্ডবাই (প্রস্তুত) ছিল।
তিনি বলেন, আমি ধারণা করছি, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে সেই বাঙ্কার দিয়ে আশপাশে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর কোনো ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে তাকে অন্য কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আসলে সেই জাহাজটি বর্তমানে কোথায় আছে তা জানা নেই।
শ্রীলঙ্কার সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বর্তমানে সমুদ্রে একটি নৌযানে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। তিনি দেশটির সীমান্তের কাছে একটি জাহাজে থাকতে পারেন।
পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়।
এদিকে এরই মধ্যে গোতাবায়ার দেশ ছেড়ে পালানোর গুঞ্জন উঠেছে। স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে কলম্বো ত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এসব তথ্য এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
প্রেসিডেন্ট কোথায় আছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটির জননিরাপত্তা মন্ত্রী তিরান আলেস আল জাজিরাকে বলেন, রাষ্ট্রপতি কোথায় আছেন তা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না।
আসলে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে কোথায় আছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে বিভিন্ন তথ্য।
কেউ বলছেন, কয়েকদিন আগে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজে ভরা হচ্ছিল লাগেজ। তখন মনে করা হয়, প্রেসিডেন্ট জাহাজে করে চলে যাচ্ছেন।
তারপর এমন খবর ছড়িয়েছে যে, তিনি দেশের উত্তর-পূর্বে একটি সামরিক শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ বলছেন পার্লামেন্টের কাছে বা শহরের বাইরে সামরিক কোনো ঘাটিতে রয়েছেন। কিন্তু এসব তথ্য নিশ্চিত নয়।
এদিকে শনিবার কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পৈতৃক বাড়িতে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছেন তিনি।
জননিরাপত্তা মন্ত্রী অ্যালেস বলেন, বিক্রমাসিংহে এখনও তার সরকারি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান এবং সভায় যোগ দেন।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠে গেছে দেশটির সাধারণ মানুষের।
খাদ্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম, লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের সংকট, পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দৈনন্দিন জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে দেশটির সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। ফলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শ্রীলঙ্কায়।