ঢাকা, বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯শে কার্তিক ১৪৩১
ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ, আজ শেষ কর্মদিবস

গলাকাটা ভাড়া আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৩২:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েকদিন ধরেই চলছে বাড়ি ফেরা। তবে    গতকাল থেকে বাস ও রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের কর্মদিবস শেষ হচ্ছে আজ। আজ রাতের মধ্যে এ চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশ রাজধানী ছাড়বেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ বছর রেলের টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায় না হলেও বাস, লঞ্চ ও বিমানে আদায় করা হচ্ছে আকাশছোঁয়া বাড়তি ভাড়া। এদিকে গতকাল ঈদযাত্রার রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে।

 

গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে মানুষ সেভাবে গ্রামে যেতে পারেনি। এবার কোনো ধরনের বিধিনিষেধ না থাকায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।

 

ট্রেনের টিকিটের জন্য রেল স্টেশনগুলোতে বাড়িফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল গতকাল। তবে এর বিপরীত চিত্র ছিল রাজধানীর গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলোতে। সেখানে অন্য বছরের মতো পর্যাপ্ত যাত্রীর দেখা মেলেনি। সে কারণে বিলম্বে ছেড়েছে প্রতিটি বাস। বাধ্য হয়ে সিট খালি রেখেই অনেক বাস গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। যাত্রীর ভিড় না থাকায় বাসের টিকিট কাটতে বেগ পেতে হচ্ছে না। তবে অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি টাকায় দূরপাল্লার বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়া হচ্ছে না বলে জানান তারা। দক্ষিণবঙ্গগামী দ্রুতি পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মজনু বলেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এরপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সিট খালি রেখে বাস ছাড়তে হচ্ছে। দেরি করে বাস ছেড়েও ৫-১০টি সিট খালি থাকছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তাদের সব অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। শরিফুল ইসলাম নামে একজন জানান, সাধারণ সময়ে কুষ্টিয়ার বাসভাড়া সাড়ে ৫০০ টাকা হলেও ২০০ টাকা বেশি দিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হয়েছে তাকে। গতকাল আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী প্রতিবেদককে বলেন, অন্য সময়ে হানিফের ভলভো বাসের রংপুরের টিকিট ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে ২ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাসের প্রতিটি টিকিটেই আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

গতকাল ভোর ৬টা ২০ মিনিট থেকেই ট্রেনযোগে ঘরে ফেরার আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ট্রেনযোগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন প্রায় ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজারের বেশি। এদিকে ঈদযাত্রার শুরুতেই গতকাল তিনটি ট্রেন বিলম্বে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়েছে। বিলম্বে ট্রেন ছাড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে যাত্রীদের মধ্যে। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভোর ৬টায় রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরুর কথা ছিল। তবে ধূমকেতুর বিলম্ব হওয়ায় ৬টা ২০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু হয়। ঈদযাত্রার প্রথম দিনের শুরুর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস ৫৫ মিনিট বিলম্বে স্টেশন ছাড়ে। আরেকটি ট্রেন খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ৮টা ৪৭ মিনিটে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল পঞ্চম দিনের মতো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। গতকাল ১ মে’র ঈদযাত্রার টিকিট দেওয়া হয়। অগ্রিম টিকিট পেতে অনেকেই গত মঙ্গলবার বিকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। যাত্রীর চাপে গতকালও অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন। লাইনে প্রথমদিকে থাকা যাত্রীরাও চাহিদামাফিক স্নিগ্ধার (এসি) টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। আর এবার রেললাইনের ই-টিকিট ব্যবস্থাপনায় রয়েছে সহজ। ই-টিকিটে অনলাইনে টিকিট পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন টিকিটের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা। সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট পাওয়ার কথা থাকলেও ই-টিকিটিং সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। এক্ষেত্রে সার্ভারে ক্লিক করা মাত্রই স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে ‘ইউ আর ভেরি ভেল্যুয়েবল টু আস, টু এনসিউর কোয়ালিটি সার্ভিস ফল ইউ উই আর পুটিং ইউ ইন এ কিউ। থ্যাংক ইউ ফর ইউর প্যাসেন্স’। ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর সার্ভারে প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেন তারা। অনলাইনে টিকিট না পেয়ে ভুক্তভোগীরা সারা দেশ থেকেই  কাছে অভিযোগ করেছেন।

 

তারা বলছেন, প্রতি বছরই ঈদের টিকিটের চাপ বাড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় বরাবরই টিকিট কম থাকে। কিন্তু এর আগে কোনো বছরে রেলের টিকিটের জন্য সার্ভারে প্রবেশের জন্য ‘কিউ’ (লাইন) মেইনটেইন করতে হয়নি। এ ছাড়া ভাগ্যক্রমে যারা কিউ মেইনটেইন করে সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছেন তারা পড়েছেন টিকিট সিলেকশন জটিলতায়। কারণ, সহজের নতুন নিয়মে প্রতিটি বগি সিলেক্ট করে সিট সিলেক্ট করতে হচ্ছে। সময় ক্ষেপণে এতেও জটিলতায় ভুগছেন যাত্রীরা।

 

প্রতিবারের ঈদের মতো এবারের ঈদ সামনে রেখে ডমেস্টিক রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটেও রাখা হচ্ছে আকাশচুম্বি দাম। টিকিটের বাড়তি চাহিদায় টিকিট স্বল্পতার অজুহাত দিয়ে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরগামী বিভিন্ন ফ্লাইটে এর আগে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে যাত্রী চাহিদার কারণে আদায় করা হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাড়িফেরা মানুষ।